সত্যজিৎ দাস (স্টাফ রিপোর্টার):
বিশ্বব্যাপি সাড়াজাগানো হৃদয়বিদারক ” হলি আর্টিজান” হামলার ৬ বছর। ২০১৬ সালের ০১ জুলাই কিছু সশস্ত্র ব্যাক্তি যারা জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত ছিলো তারা এই নৃশংস হত্যাকান্ড চালায়।সেদিন রাত ৯ টা বেজে ২০ মিনিটে সর্বমোট ৭ জন লোক হলি আর্টিজানে প্রবেশ করে। তারা ভেতরে প্রবেশের পর গুলি চালায় ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় পাশাপাশি অনেককে জিম্মি করে। গুলাগুলি পরবর্তী সময়ে সেখানে পুলিশ পৌঁছালে তাদের সাথে বন্দুক যুদ্ধ শুরু হয়। এতে ২ জন পুলিশ নিহত হন এবং বেশ কিছু আহত হন। পুলিশ পুরো এরিয়া ঘিরে রাখে,মাইকে জিম্মিদের ছেড়ে দিতে বললে জঙ্গিরা ৩টি শর্ত দেয় যেগুলো পুলিশ মেনে নেয়নি। তারা ভেতরে আটকৃত কয়েকজনের উপর নির্যাতন চালায়। বিদেশিদের হত্যা করে ফেলে ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে।
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করার। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থার সবাই ঐ স্থানে ছিলেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সোয়াডস ইউনিটকে দিয়ে অপারেশন পরিচালনার কথা থাকলেও সরকার প্রধান সহ উর্ধতন কর্মকর্তারা ভরসা রাখেন পৃথিবীর অন্যতম চৌকস ও দূর্ধর্ষ ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের উপর।
পরের দিন সকালে সিলেট থেকে উড়িয়ে আনা হয় প্যারা কমান্ডোদের। সকাল ৭ টা বেজে ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। ১২/১৩ মিনিটের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় প্যারা কমান্ডো ইউনিট। ১ জন জঙ্গি বাদ দিয়ে সবাই নিহত হয়। ততক্ষণে জঙ্গি বিদেশি সহ অনেককেই হত্যা করে ফেলেছিলো।
১ জুলাই রাত থেকে পরদিন (২ জুলাই) সকাল পর্যন্ত এ জঙ্গি হামলায় পুলিশের দুই কর্মকর্তা ও ২০ বিদেশি নাগরিক নিহত ও আহত হন আরও ৫০ জন। উক্ত ঘটনার পর আইএস দায় স্বীকার করে। ২ জুলাই সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ নিহত হয় হামলাকারী ছয় জঙ্গি। এই ঘটনার পর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গি-উগ্রবাদ মোকাবিলায় জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেন। শুরু হয় একের পর এক জঙ্গিবিরোধী অভিযান। হলি আর্টিজান হামলার পর গত ছয় বছরে এক হাজারের বেশি অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ২ হাজার ৪১০ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়।
হলি আর্টিজান হামলা পরবর্তী ধারাবাহিক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বর্তমান প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় দেশে জঙ্গিবাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই মুহূর্তে বড় ধরনের কোনো জঙ্গি হামলার হুমকি ও আশঙ্কা নেই। হলি আর্টিজান হামলার পর জঙ্গিদের সক্ষমতা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
২০১৩ সাল থেকে ব্লগার,লেখক-প্রকাশক,বিদেশি নাগরিক ও ভিন্ন ধর্ম বা মতালম্বীদের ওপর ‘টার্গেটেড কিলিং’ চলার মধ্যেই ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজিম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট নামে নতুন জঙ্গিবিরোধী ইউনিট গঠন করা হয়। এছাড়া,ধারাবাহিকভাবে জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)।যারা জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি ‘সফট অ্যাপ্রোচের’ মাধ্যমে জঙ্গিদের পুনর্বাসন,সচেতনতা বৃদ্ধিসহ নানামুখী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। হামলার সক্ষমতা হারালেও বর্তমানে অনলাইন প্ল্যাটফর্মেই জঙ্গিদের সবচেয়ে বেশি তৎপরতা রয়েছে,বিষয়টি চিহ্নিত করে অনলাইন প্লাটফর্মকে গুরুত্ব দিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানো হচ্ছে।
আলোচিত এ মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ৭ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট পেপারবুক আসে উচ্চ আদালতে। এক হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার পেপারবুক শুনানির জন্য প্রস্তুত হলেও নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ।
জঙ্গি হামলার ৬ বছরে এসে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা আমিন উদ্দিন জানালেন,মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চাইবেন তিনি। এ এম আমিন উদ্দিন বলেন,মামলাটি সম্পূর্ণ তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরখাস্ত ফাইল করে যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি করা হয়,সে জন্য আমরা চেষ্টা করব। নিম্ন আদালত যে রায়টি দিয়েছেন,আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সে রায়ের পক্ষে অবস্থান নেব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে,হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডির পর জঙ্গিবাদবিরোধী শক্ত অবস্থানের কারণে বড় ধরনের হামলার সক্ষমতা হারিয়েছে জঙ্গিরা।