পলাশ পাল স্টাফ রিপোর্টারঃ
মন্ত্রী, এমপিসহ রাজনীতিক ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে ছবি তুলে প্রতারণা করা ‘হবিগঞ্জের সাহেদখ্যাত’ তারক শাহ্ আফজাল এক সময় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন সময় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসুচিতে দেখা যেত তাকে। তবে সময়ের ব্যবধানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘাটে নৌকা ভিড়ানোর চেষ্টা করে সে। এতে বেশ সফলতাও পায়। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি তার!
অনুসন্ধানে জানা যায়- এক সময় আনসার সদস্য হিসেবে চাকরি করত প্রতারক শাহ্ আফজাল। অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে সেখান থেকে চাকুরিচ্যুত হয়। এরপর হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির এক সাবেক সাধারণ সম্পাদকের বাসায় কাজ নেয়। সেখানে বেশ কিছুদিন কাজ করার পর জেলা বিএনপির আরেক শীর্ষ নেতার ব্যক্তিগত সহকারি হিসেবে কাজ করে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে ভালো সক্যতা গড়ে তুলে সে। এক পর্যায়ে যুবদলের নেতাকর্মীদের সাথে উঠা-বসার সুবাধে বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে যুবদল নেতা বলেও পরিচয় দেয়। বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসুচিতেও অংশ নেয় সে। কিন্তু হবিগঞ্জ থেকে তেমন সুবিধা করতে না পারায় কাজের সন্ধানে সিলেট চলে যায়। সেখানে গিয়ে এক সাংবাদিকের বাসায় কাজ নিয়ে বড় বড় নেতাদের সাথে ছবি তোলার সুযোগ খুঁজতে থাকে। এভাবে সে বিভিন্ন নেতাদের কাছে চলে যায়। এক পর্যায়ে বিচারপতি, মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার, নৌ-বাহিনীর কমান্ডারসহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের সাথে ছবি তুলতে শুরু করে।
ভিআইপিদের সাথে ছবি দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করে বঙ্গভবন, গণভবন ও সচিবালয়ে তার অবাধ যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। যে কোন কাজ সে অসাহাসেই করে দিতে পারে। কোন কোন স্থানে তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবেও প্রচার করেন। সিলেট থেকে ঢাকায় ডমেস্টিক ফ্লাইটে ভ্রমণ করে সেই ছবিও মাঝে মাঝে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দেয় আফজাল।
আর সাধারণ মানুষ এই ছবি দেখে বিশ্বাস করে শাহ আফজাল এর মাধ্যমে সব কাজই সম্ভব। ফলে বিভিন্ন লোকজন ঠিকাদারী কাজ, চাকরি, নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন এবং বিদেশের ভিসা পেতে লাখ লাখ টাকা দেয় তাকে। কিন্তু টাকা দেয়ার পর কোন কাজ না করে টাকা হাতিয়ে নেয়। টাকা ফেরত চাইলে পাল্টা হুমকি দিয়ে বলে বিচারপিত তার আত্মীয়। বড় বড় কর্মকর্তারা তার পকেটে। বাড়াবাড়ি করলে তিনি ফাঁসিয়ে দেবে। ফলে প্রতারিত হয়েও কেউ মুখ খোলেনি তাঁর বিরুদ্ধে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি ওই প্রতারকের। প্রতারণার অভিযোগে পুলিশের হাতে বন্দি হয়ে এখন তিনি আছে কারাগারে।
সর্বশেষ হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের বাংলোতে বন্ধুদের নিয়ে গোপনে প্রবেশ করে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে ধরা পড়ে আফজাল। অবশ্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে মুচলেকায় প্রশাসনের কাছ থেকে মুক্তি পেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পরই বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
আফজালের প্রতারণা থেকে বাদ যায়নি রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধাও। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার গৌর প্রসাদ রায়ের কাছ থেকে আফজল পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকরি নিয়ে দিবে বলে ৩ লাখ টাকা নেয়। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মল্লিখ সরাই গ্রামের হাশিম মিয়া নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ইংল্যান্ড প্রেরণ করবে বলে চুক্তি করে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় তিনি। হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি শফিউল্লাহর কাছ থেকে পিস্তলের লাইসেন্স করে দিবে বলে নেয় ৬০ হাজার টাকা। এভাবে বহু লোকের সাথে প্রতারণা করেন আফজাল।
শাহ আফজাল হোসেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার আউশপাড়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল হেকিমের ছেলে। তিনি হাই স্কুলের লেখাপড়া শেষ করতে পারেনি।