গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি-
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারীতে বিজিবি কর্তৃক সিঙ্গেল (পাথর) বোঝাই ট্রাক্টর আটক করাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও এলাকাবাসী মুখোমুখি। সরজমিনে গিয়ে জানা যায় ঘর তৈরীর সিঙ্গেল টাক্টর দিয়ে পরিবহনে বিজির বাধা এতে উভয়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি উত্তেজনা দেখা দেয় ।
শনিবার ১২ মার্চ দপুরে বিছনাকান্দির বগাইয়া গ্রামে বিজিবি ও এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনার এই ঘটনাটি ঘটে। পরে বর্তমান চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন শিহাব, সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবুল কালাম আজাদ, ইউপি আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন ও ওয়ার্ড সদস্যবৃন্দ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে সমস্যার নিরসন হয়।
স্থানীয় সূত্রে খোজ নিয়ে জানা যায়, বগাইয়া গ্রামের আবদুস শুক্কুরের ছেলে কামাল তার ট্রাক্টর দিয়ে পাথর কোয়ারী থেকে সিঙ্গেল নিয়ে আসছিলেন। বিছনাকান্দি সীমান্ত বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুরুজ আলি খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গাড়িটি আটক করলে কামাল ও তার পরিবারের লোকজন গাড়ির সামনে পড়ে যায় এবং বলে গাড়ি নিতে চাইলে আমাদের উপর দিয়ে নিয়ে যান। নতুবা গাড়ি নিতে পারবেন না। বিজিবির লোকেরা গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিলে তখন তারা অপারগ হয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীকে জড়ো করেন। এরপরে বিজিবি ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। খবর পেয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন শিহাব, সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবুল কালাম আজাদ সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সরেজমিন গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করেন।
গাড়ির মালিক বগাইয়া গ্রামের আব্দুস শুকুর মিয়ার ছেলে কামাল হোসেন বলেন, আমি ঘর বানানোর জন্য সিঙ্গেল কিনে গাড়ি করে নিয়ে আসছি। বিজিবি এসে অবৈধ পাথর বলে আমার গাড়ি আটক করে নিয়ে যেতে চায়। তখন আমি ও আমার পরিবারের লোকজন গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ি তারপরও তারা গাড়ি স্টার্ট দিলে তখন মাইকে ঘোষনা করা হলে লোকজন জড়ো হয়। কামাল বলেন, ভাই আমার শরীরে কাঁপছে, আমি কথা বলতে পারছি না। যদি আমার গাড়ি নিয়ে যাইতো তাহলে আমার বাঁচা মরা সমান ছিল। আমার পরিবারের একমাত্র সম্বল এই গাড়ি ছাড়া আর কিছু নাই।
রুস্তমপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন সিহাব বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক আমি ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি পরিস্থিতি খুবই খারাপ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। আমি চাইছিলাম না এই ব্যাপারে ইউএনও স্যারকে ফোন দেই। এখানে সাবেক চেয়ারম্যান ওয়ার্ড সদস্য বৃন্দ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও ছিলেন। পরিশেষে আমি বাধ্য হয়ে ইউএনও স্যারকে ফোন দেই। ইউএনও স্যার ফোন পেয়ে তাদের সাথে কথা বলেন।
তবুও তারা নাছোড় লিখিত না দিলে হবে না। সবদিক বিবেচনা করে শেষমেষ আমি সহ সকলে লিখিত দিয়ে অন্য গাড়ি মাধ্যমে সিঙ্গেল ক্যাম্পে পাঠিয়ে শেষ রক্ষা হয়। তিনি আরো জানান এলাকার গরিব মহিলারা হাত দিয়ে পাথর উত্তোলন করে মাথায় টুকরি দিয়ে পাথর জমা করে। বিজিবি সদস্যরা সেই পাথর পা দিয়ে লাতাইয়া ফেলে। আপনারাই বলুন এইসব গরিব মহিলারা কই যাবে কার কাছে বিচার দিবে।
এ ব্যাপারে বিছনাকান্দি সীমান্ত বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার সুরুজ আলী জানান, অবৈধ পাথর উত্তোলনের দায়ে গাড়িটি আটক করি। বর্তমান চেয়ারম্যান সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের লিখিত ও মোসলেখার মাধ্যমে গাড়ি ছেড়ে দেই এবং পাথর জব্দ করি। তিনি আরো জানান, তারা বলেছেন পরবর্তীতে আর এরকম হবে না।
উল্লেখ্য- ২০ দিন পূর্বেও বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারীতে বিজিবি ও একই গ্রামের আলী আকবর নামে এক ব্যক্তির সাথে ট্রাক্টর আটক করাকে কেন্দ্র করে এই রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। বিজিবি আলী আকবরের ট্রাক্টর আটক করলে আলী আকবর গলায় দড়ি লাগিয়ে ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে আলী আকবরের পরিবারের লোকজন ও চারপাশের কিছু লোকজন জড়ো হলে বিজিবি ট্রাক্টর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। এ ব্যাপারে কোম্পানি কমান্ডার স্বীকার করে বলেন, অবৈধ পাথর উত্তোলন করে কেউ গলায় ফাঁস দিয়ে মরতে চাইলে আমার কিছু করার নেই।