সিলেট হেল্থ ডেস্ক:
একটি আমড়ায় প্রায় তিনটি আপেলের সমান পুষ্টি রয়েছে। দেশি ফল আমড়া,টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি বেশ জনপ্রিয়। কাঁচা খাওয়ার পাশাপাশি এটি খাওয়া যায় আরও অনেকভাবে। আচার,মোরব্বা,সালাদ,চাটনি ইত্যাদি তৈরি করা যায় আমড়া দিয়ে।
আমড়ায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি,লোহা, ক্যালসিয়াম আর আঁশ রয়েছে। হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর মধ্যে ভিটামিন সি রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। অসুস্থ ব্যক্তিরা আমড়া খেলে মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আসে। এতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। শিশুদের দৈহিক গঠনে এটি খুব দরকারি। রক্তস্বল্পতাও দূর করে।
আমড়ার অনেক আয়ুর্বেদিক গুণাগুণও রয়েছে। এটিকে আয়ুর্বেদে বলা হয় আম্রতক। এছাড়া আমড়াগাছেরও রয়েছে অনেক ঔষধি গুণাগুণ। এ গাছের বিভিন্ন অংশ ডায়রিয়া,কানের ব্যথা,ক্ষত এবং হাইপারসিডিটি চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
আমড়ার ইংরেজি নাম Hog Plum.এটা একপ্রকার ফল,যা মাঝারি আকারের পর্ণমোচী বৃক্ষে ফলে। বৈজ্ঞানিক নাম Spondias Pinnaata Kurz বা Spondias Mombin.বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকা, ভারত,শ্রীলংকা এবং ইন্দোনেশিয়ায় এই গাছটি জন্মে।
আমরা গাছগুলো ২০-৩০ ফুট উঁচু হয়,প্রতিটি যৌগিক পাতায় ৮-৯ জোড়া পত্রক থাকে, পত্রদন্ড ৮-১২ ইঞ্চি লম্বা এবং পত্রকগুলো ২-৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। কাঁচা ফল টক বা টক মিষ্টি হয়। তবে পাকলে টকভাব কমে আসে এবং মিষ্টি হয়ে যায়। ফলের বীজ কাঁটাযুক্ত। ৫-৭ বছরেই গাছ ফল দেয়। আমড়া কাঁচা ও পাকা অবস্থায় রান্না করে বা আচার বানিয়েও খাওয়া যায়।
উপাদানঃ-
আমড়া কষ ও অম্ল স্বাদযুক্ত ফল। এতে প্রায় ৯০%-ই পানি, ৪-৫% কার্বোহাইড্রেট ও সামান্য প্রোটিন থাকে। ভিটামিন-সি, ক্যারোটিন, সামান্য ভিটামিন-বি, ক্যালসিয়াম, আয়রনও রয়েছে। আমড়ায় যথেষ্ট পরিমাণ পেকটিনজাতীয় ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টজাতীয় উপাদান থাকে।
প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ার পুষ্টিগুণঃ-
শর্করা ১৫ গ্রাম, আমিষ ১.১ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫৫ মিলিগ্রাম, আয়রন ৩.৯ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৮০০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি ১০.২৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৯২ মিলিগ্রাম, অন্যান্য খনিজ পদার্থ ০.৬ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালরি।
আমড়ার উপকারিতা ও গুণাগুণ আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আমড়া আমাদের সকলের নিকট প্রিয় একটি ফল। আমড়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্যারোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও সামান্য পরিমাণে প্রোটিন, পেকটিন জাতীয় ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে।
আসুন জেনে নেই আমড়ার উপকারিতা ও গুণাগুণঃ-
১) আমড়াতে বিদ্যমান পেকটিন জাতীয় ফাইবার বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করে শরীরকে সুস্থ রাখে।
২) আমড়া খেলে মুখের অরুচিভাব দূর হয় এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে ঠাণ্ডা,কাশি ও কফ দূর করে এ ফলটি।
৩) আমড়া রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে স্ট্রোক ও হৃদরোগের হাত থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে এবং শরীরের পেশী গঠনে সহায়তা করে।
৪) আমড়াতে রয়েছে আপেলের চেয়েও বেশি পুষ্টিগুণ। কাঁচা অবস্থায় এটি টক থাকে,পেকে গেলে টকভাব খানিকটা চলে যায়। এই ফলটি কাঁচা-পাকা,রান্না করে কিংবা আচার বানিয়ে খাওয়া হয়।
৫) আমাদের ত্বক,নখ ও চুল সুন্দর রাখতে আমড়া বেশ সাহায্য করে। বিশেষ করে ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
৬) যারা রক্ত স্বল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য আমড়া খুবই উপকারী। কারণ আমড়াতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় শরীরের রক্তের চাহিদা পূরণ হয় এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সহয়তা করে।।
তাছাড়া আমড়া বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই আমড়ার সিজনে প্রতিদিন এই ফল খেলে আপনি নানা সংক্রমণ থেকে সহজেই রক্ষা পেতে পারেন। আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায়,ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফলে সহজেই সুস্থ থাকা সম্ভব হয়।
সিলেট নিউজ/এসডি.