আল-মামুন খান, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:
রোপা-আমন মৌসুমে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে আমন ধানের আবাদি বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ একদিন আগেও ছিল চারিদিকে সবুজের সমারোহে ঘেরা। দূর থেকে দেখে মনে হয়েছিল, আমন ধানে সবুজ শীতল পাটিতে বিছিয়ে রেখেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সমতল ও অসমতল ভূমি। মৃদু হাওয়ায় ধানের সবুজ চারার গায়ে লেগে হেলে-দুলে নাড়া দিচ্ছিল। যেদিকেই তাকানো হতো, সেই দিকেই সবুজের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। সবুজ ধানে প্রকৃতি অপরূপ সাজে সেজেছিল। শ্রাবণে নির্মল আকাশ ও সবুজের সমারোহে এ ধরা যেন নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছিল। কিন্তুগত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তা যেন আজ মরণ কামড় দিয়েছে কৃষকের পেটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ৩নং ধলা, ৪নং জাওয়ার, ৫নং দামিহা, ৬নং দিগদাইড়, ৭নং তাড়াইল-সাচাইল ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া ১নং তালজাঙ্গা, ২নং রাউতি ইউনিয়নের প্রায় ৭’শ হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবছর জমিতে তারাবিনা সেভেন ৮, হাইব্রিডবিধান -৭ ,২৮ ,২৯,৪৯, ৫২, বায়ার কোম্পানিরধানী গোল্ড, তেজ ওপেট্রোকেম কোম্পানির পাইওনিয়ার এগ্রো-১২ জাতেরধান রোপণ করছেন।
তালজাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি ৩৫ কাটা জমি রোপন করেছি এক সপ্তাহ হলো। কিন্তু আজ সব পানির নিচে। আমি সর্বহারা হয়ে গেলাম। শ্রীপুর গ্রামের দুলাল মিয়া বলেন, আমার ১২ কাটা ক্ষেত ধান বের হওয়ার পথে কিন্তু এখন পানির দুই হাত নিচে ডুবে আছে। ধলা ইউনিয়নের জুয়েল মিয়া বলেন, ৮০ কাটা জমির মধ্যে ৬০ কাটা জমি রোপন কাজ শেষ হয়েছিল, বাকি জমি রোপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু সকল জমিই এখন পানির নিচে। তাড়াইল-সাচাইল ইউনিয়নের উজ্জল ভূঞা বলেন, কয়েকটি বন মিলিয়ে আমার প্রায় ২ একর জমি রোপন হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির পানি সব শেষ করে দিয়েছে। এভাবে আরো অনেক কৃষক তাদের চোখের পানি ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। আমাদের সম্বল পানির নিচে ভাসছে।
তাড়াইল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা জানান, চলতি মৌসুমে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে কৃষক। এ বছর হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ হাজার ৫শত ৫৫ হেক্টর। কিন্তু অর্জিত হয়েছে ৭ হাজার ৭’শ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আমন রোপণ হয়েছে ।
তিনি আরো জানান, আবহাওয়ার কারণে মাঠের কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে রোপা-আমন ধান ৮৭০ হেক্টর এবং অন্যান্য ৩০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন একটি রিপোর্ট আপাতত তৈরি করেছি। তবে কি পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো নিরূপণ করা হয়নি। বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমানটা পানি নেমে গেলে বুঝা যাবে। সরেজমিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে।