শিরোনাম
তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে পুনাকের বার্ষিক বনভোজন উদযাপন জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড ও মাসিক কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত জৈন্তাপুরে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী’র স্টল পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান  রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণে ইমামগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন-জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান ছাতকে সেবা ব্লাড ফাউন্ডেশন ইসলামপুর ইউপি’র উদ্যোগে ঈদ সামগ্রী বিতরণ ৮৮,০০০ টাকার জাল নোটসহ চুনারুঘাটের ‘জামাল মিয়া’ গ্রেফতার বছর ঘুরে আইলো আবার ‘বৈশাখ’ জৈন্তাপুর প্রবাসী গ্রুপ কাতার শাখার ঈদ আনন্দ ভ্রমণ বিশারকান্দি ইউনিয়ন যুবদলের কমিটি গঠন আবুল কালাম আহবায়ক, ফিরোজ সদস্য সচিব
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৬ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

পাঁচ সমুদ্র বন্দরের মালিক হচ্ছে বাংলাদেশ।

Coder Boss / ৭৪৯ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৮ জুন, ২০২০

বদরুজ্জামান শিপন,নবিগঞ্জঃ

স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকেই বাংলাদেশে চট্টগ্রাম এবং মোংলা এই দুটি সমুদ্র বন্দর রয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এ দুই বন্দরের উন্নয়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি আরো তিনটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। বর্তমান দুই বন্দরের উন্নয়ন ও নতুন সমুদ্রবন্দরগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনীতির চাকা আরো গতিশীল হবে। এই বন্দরগুলো বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে নতুন করে চেনাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশের বর্তমান এবং নির্মাণাধীন সমুদ্রবন্দরগুলোর বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো-

১. চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর: ১৮৮৭ সালে চালু হওয়া বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানির ৯০% এই বন্দর ব্যবহার করেই হয়ে থাকে। বিশ্বের সব থেকে ব্যস্ততম বন্দরের তালিকাগুলো লয়েডস প্রতি বছর প্রকাশ করে। ২০১৯ সালে এই বন্দরটিকে বিশ্বের ৬৪তম ব্যস্ত বন্দরের স্বীকৃতি দিয়েছে তারা। ৯.৫ মিটার ড্রাফটের ছোট জাহাজ ভিড়তে পারে এই বন্দরে। ১০ হাজার টনের বেশি জাহাজ ভিড়ানোর ক্ষমতা নেই বন্দরটির। এজন্য মাদার ভেসেল এখানে ভিড়তে পারে না। স্বাধীনতার এত বছর পার হলেও কিছু গ্যানট্রি ক্রেন ছাড়া আহামরি কোন উন্নয়ন হয়নি এই বন্দরে। বন্দরটি বর্ধিত টার্মিনাল করবার স্থান ও নেই। তবে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের এক্সটেনশন হিসাবে বে টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে।

সমুদ্রের মোহনায় জেগে উঠা চরে প্রায় ১২০০ একরের বেশি জমিতে বে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে। এতে খরচ হবে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এখানে বন্দর চ্যানেলের গভীরতা এমন হবে যাতে প্রায় ১৩ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে। ফলে বড় মাদার ভেসেল গুলি ভিড়তে আর অসুবিধা হবে না। ৫০০০ কন্টেইনার বাহী জাহাজ সহজেই ভিড়তে পারবে। সেই সাথে আনলোড করার সময় কমে হবে ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা। গতি আসবে বন্দরের কার্যক্রমে। এখানে মোট তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। ১৫০০ মিটার বা ১.৫ কিমি এর মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, ১২২৫ মিটারের কন্টেইনার টার্মিনাল ১, এবং ৮৩০ মিটারের কন্টেইনার টার্মিনাল-২।

২. মোংলা সমুদ্র বন্দর: পাটকেন্দ্রিক গড়ে উঠা শত শত শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল খুলনায়। মোংলা ছিল জমজমাট একটি বন্দর। কিন্তু কালক্রমে পাটকলসহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবার কারণে মোংলা বন্দর তার গুরুত্ব হারিয়েছে। বন্দর চ্যানেলে বেশ কিছু জাহাজ ডুবে যাওয়া এবং গভীরতা কমে যাবার ফলে এখন মোংলায় ৭.৫ মিটারে বেশি ড্রাফটের কোন জাহাজ ভিড়তে পারে না। এক প্রকার অচল বলা চলে এই বন্দর। এই বন্দরের করুণ অবস্থার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। পদ্মার উপর কোন সেতু না থাকায় এই বন্দর এক প্রকার রাজধানী হতে বিচ্ছিন্ন। তবে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে এবং সরাসরি রেল সংযোগ নিয়ে চলমান প্রকল্প শেষ হলে এই বন্দর কিছুটা হলেও তার গুরুত্ব ফিরে পাবে।

৩. পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর: পটুয়াখালীর পায়রা নদীর মোহনায় রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা বন্দরের অবস্থান। ব্রিটিশ ফার্ম এইচ আর ওয়ালিংটন এন্ড কনসোর্টিয়াম এর মূল্যায়ন অনুসারে বাংলাদেশে ১৪.৫ মিটার ড্রাফটের একটি সমুদ্র বন্দর করা খুব জরুরি। অবস্থান বিবেচনায় সাতক্ষীরা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সমুদ্র উপকূল থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সমুদ্র উপকূলের এই জেলাগুলির অবদান সামান্য বলা চলে।

অর্থাৎ সমুদ্রের সম্ভাবনা হিসাবে বাংলাদেশের মোট জিডিপির অর্ধেক অন্তত এই জেলাগুলি থেকে আসার কথা থাকলেও অবকাঠামোগত অপ্রতুলতার জন্য সমুদ্রের সুবিধাকে আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। যেহেতু দক্ষিণাঞ্চলের ঠিক মাঝ বরাবর পায়রা বন্দরের অবস্থান সেক্ষেত্রে বন্দরকে ঘিরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন শক্তি সঞ্চার হবে সেটা সহজেই বোঝা যায়।

পায়রা বন্দরের প্রাথমিক, মধ্যম এবং চূড়ান্ত পর্বে এটি বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ বন্দর হয়ে উঠবে। প্রকল্পটি প্রায় ৭ হাজার একর জমির উপর। পায়রা বন্দরের প্রবেশ চ্যানেলে নদীর প্রশস্ততা প্রায় ৪ কিমি। আর বন্দর থেকে সমুদ্রের দিকে টানা ১১ কিমি দীর্ঘ টার্মিনাল করা হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর টার্মিনালে মাত্র ১ হাজার ৫০০ কন্টেইনার রাখবার মত ব্যবস্থা আছে। পায়রার ক্ষেত্রে টার্মিনালে প্রায় ৭৫ হাজার কন্টেইনার রাখা যাবে। ১ লাখ বর্গ ফিটের ওয়ারহাউজের কাজ প্রাথমিক ভাবেই শেষ করা হবে। গভীরতার বিচারে পায়রা বন্দরে প্রায় ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর ব্যবস্থা থাকবে। যেখানে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ ৯.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। আর ১২ মিটারের বেশি ড্রাফট থাকলে সেটাকে গভীর সমুদ্র বন্দর বলা যায়।

বন্দরের মোট প্রকল্পকে ১৯ টি ভাগে ভাগ করে কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রায় ১২ থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলারের মত বিনিয়োগ হবে। সেই সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদন হাব করা হচ্ছে। থাকছে এলএনজি টার্মিনাল। এই বন্দরের চাহিদার প্রধান গ্রাহক হবে বন্দর ঘিরে গড়ে তোলা বিদ্যুৎ হাব এবং ১০ হাজার একরের অর্থনৈতিক অঞ্চল। সেই সাথে জাহাজ নির্মাণের জন্য আলাদা অঞ্চল সৃষ্টি করা হচ্ছে।

৪. মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর: বাংলাদেশের সব থেকে গভীরতম সমুদ্রবন্দর হচ্ছে মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর। মহেশখালী দ্বীপের আয়তন প্রায় ১৪ বর্গকিলোমিটার। সেই সাথে মাতারবাড়ি চ্যানেলের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪.৫ কিমি। ভাটার সময় গভীরতা থাকে প্রায় ১৪ মিটার। আর জোয়ারের সময় প্রাকৃতিক ভাবেই গভীরতা হয় প্রায় ১৮.৫ মিটার। যদি ড্রেজিং করা হয় তবে গভীরতাকে আরো বাড়ানো সম্ভব।

মাতারবাড়ি এর লোকেশন নির্ধারণ এবং কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ-কেন্দ্র নির্মাণ আর এসবের নিমিত্তে বন্দর করবার কাজ পেয়েছে জাপান। শুরু থেকেই প্রকল্পটি নিয়ে খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়নি। খরচ ছিল ৩৬ হাজার কোটি টাকা যার ভেতর জাপান অর্থায়ন করবে ২৯ হাজার কোটি টাকা। আপাতত প্রায় ৪ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি করা হবে। কয়লা নামানোর জন্য বন্দর সুবিধা এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত।

মাতারবাড়ি বন্দরের কাজ শেষ হলে এই দ্বীপে ২৪ হাজার একরের বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিশাল বিনিয়োগ আসবে। ইতোমধ্যে চীন সেখানে ৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে। জাপান তাদের বিশাল বিনিয়োগ এখানে আনছে। এই বন্দরকে কক্সবাজারের সাথে যুক্ত করার জন্য রেল ও সড়ক সংযোগ ঘটানো হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্প কারখানা এবং দেশের সবথেকে বড় বিদ্যুৎ হাবের জন্য কয়লা বহন এই বন্দরের প্রধান কাজ হবে। এছাড়া এলএনজি এবং অন্যান্য কার্গো বহনেও ব্যাবহার হবে এই বন্দর।

৫. মিরসরাই ইকোনমিক জোন সংলগ্ন প্রথম বেসরকারি সমুদ্রবন্দর: জাপানের জেডিয়াই, সজিত কর্পোরেশন এবং আমাদের দেশের এনার্জিপ্যাক জোটবদ্ধ হয়ে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে উপমহাদেশের সব থেকে বড় ইকোনমিক জোন মিরসরাই সংলগ্ন একটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করবে। জাইকা এখানে ২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করার জন্য রাজি হয়েছে। আইএফসি অর্থায়ন করবে ১০০ মিলিয়ন ডলার।

সারাবিশ্বে মিরসরাই ইকোনমিক জোনের মত এত আকর্ষণীয় ইকোনমিক জোন খুব কম আছে। ইকোনমিক জোন করার প্রকল্প নেয়ার পর এটি এখন কর্মমুখর একটি অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। ৩০ হাজার একরের উপর উপমহাদেশের সব থেকে বড় ইকোনমিক জোনের সাথেই মিশে আছে সমুদ্র। এই ইকোনমিক জোনের চাহিদা বিবেচনায় আরো ১৩ হজার একর জমি যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেটি হলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের আয়তন হবে ৪৩ হাজার একর। ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ে এখান থেকে মাত্র ১৮ কিমি দূরে। বিমান বন্দর খুব কাছেই। সেই সাথে চট্টগ্রাম বন্দর ও খুব কাছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের উপর এই বিশাল অঞ্চলে গড়ে উঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানের চাপ যেন না পড়ে সে কারণেই সজিত কর্পোরেশন এখানে একটি সমুদ্র বন্দর করবে যেটার কাজ মূলত শুধু এখানে বিনিয়োগ করা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য পণ্য আমদানি এবং রপ্তানি করা। এর অর্থ দাঁড়ায় এই ইকোনমিক জোনের নিজস্ব একটি ডেডিকেটেড সমুদ্রবন্দর থাকবে। ৪০ হাজার টনের মাদার ভেসেল ভিড়তে পারবে এখানে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Registration Form

[user_registration_form id=”154″]

পুরাতন সংবাদ দেখুন

বিভাগের খবর দেখুন