শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

বছর ঘুরে আইলো আবার ‘বৈশাখ’

SATYAJIT DAS / ১৬ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৪

চারুলতা ভট্টাচার্য:

চৈত্রের শেষ,বৈশাখের সূচনায় হয় চৈত্র সংক্রান্তি। এই দিন বাঙালিদের বাড়িতে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান হয়। নানা রকমের পাঁচ মিশিলি খাবার তৈরি হয়। তাতে সব রকমের স্বাদ থাকে। যাতে নতুন বছর আসার আগে টক,ঝাল,মিষ্টি সব রকমের স্বাদকে সঙ্গে নিয়ে গোটা বছর পালিত হয়,সেই ভাবনা থেকেই এই পদ রান্না হয়। একদিকে যেমন সবরকম দুঃখ-দুর্দশা বছরের শেষ দিনে পিছনে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া,তেমনই জীবনের চলার পথে মিষ্টি-টক-তেতো সবরকম অভিজ্ঞতাকে গ্রহণ করে নেওয়ার রূপক হল পাঁচন খাওয়ার রীতি।

আজ থেকে শুরু হলো চৈত্র সংক্রান্তির আয়োজন। মায়ের ব্যস্ততা। বাড়ি জুড়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেবার তড়িঘড়ি। পুরনোকে বিদায় দিতেও উৎসব এর কমতি নেই। এ যেন বিদায় নয়,পুরনো দিনের কাছে প্রাপ্তির স্বীকারোক্তি।

ছোটোবেলায় দিদি আর আমি নারকেলের কাঠি নেড়ে নেড়ে পরিস্কার করতাম টিনের ঘরের প্রতিটি খোপ।মায়ের লেপাপোঁছা শেষ হলে তবে আরেক আয়োজন। নদীর ঘাট থেকে নিয়ে আসা আঠালো মাটির গন্ধে ঘরটা তখন মৌ মৌ করতো।লেপা ঘরে মায়ের আঙুলগুলো যে ঢেউয়ের মতো খেলে যায় তার নাম ইতিহাস।

তিতা শাক টুকানোর জন্য জঙলায় হেঁটে বেড়াচ্ছি আমরা সকাল থেকে। গিমা বত্তা তেলাকুচার ডগা লকলকিয়ে বইছে স্মৃতির পাতায়। তিন দিনের নিরামিষ পর্ব শুরু হবে। জানিনা কেন এই তিন দিনকে বলা হয় বিষুকাল। বিষু শব্দটাও লোকজ এবং অনেকটাই আমাদের সম্প্রদায়ের নিজস্ব।আড়বিষু,ঝাড়বিষু আর তৃতীয় দিন মহাসংক্রান্তিতে পালন করা হয় মহাবিষু। আমাদের বর্ষীয়ানরা এসময়ে নির্জলা উপোস করবে তিনদিন।

সেলাইবিহীন কাপড় আর মাটিতে শুয়ে দিন-রাত হিসাব করবে আসছে বছরের। জুই পিসি,কানন দি, জডি দি,জেঠিমা,খুকু পিসির মা আরও অনেকে আসছে স্মৃতি রোমন্থন করা চোখে। সারা বাড়িতে আমাদের এক অজানা কারণে তখন ছুটাছুটি।

মন্দিরে আসছে তরমুজ,বাঙ্গি কিংবা আইটা কলা। আমরা আটচালা ঘরে বটি নিয়ে বসে যাচ্ছি সবাই ফল কাটতে। কোথাও কাঁচা আম গাছ থেকে পড়ছে কিংবা হয়তো আমার কাছে একটা বাতাস এখন বয়ে চলে গেছে আমাদের সেইসব সযত্নে সংরক্ষণ করা অমিয় স্মৃতি হয়ে।

 

ছোটোবেলা শুনেছি আমাদের কেও কেও বলতে পারতেন,আগামী বছর তার জীবনান্ত। এমনই এক মহাবিষুতে মা কুমিল্লার পিসির ছায়া দেখলেন ভর সন্ধ্যায়;তেতুল তলার সেক্ষণে পিসিমা লালপেড়ে শাড়িতে ঝকঝকে করেছিলো। এরপর সে বছরই বর্ষায় আসে পিসিমার খবর।

 

ফলাহারী যারা তাদের যত্ন নেওয়ার জন্য আমরা তখন তটস্থ। আমাদের যে যোগী জীবন তাতে আমাদের পেশা ভিক্ষাবৃত্তি। বছরের এই শেষ তিনদিন কেও ভিক্ষা করতে যাবে না। ভিক্ষার অনুষঙ্গ যে লাল কাপড় আর ডাং কাঠি সেটি এই তিনদিন আমরা পূজা করবো। কর্মমুখী জীবনের যে শিক্ষা আমি আমার শৈশব থেকেই পেয়েছি তাই সারাজীবন আরাধ্য।

 

মহাবিষুর দিনে বারোয়ারি উঠানে রান্না করা হবে আকাঁড়া চাল ডালের খিচুড়ি;আধুয়া সবজি আর তেলহীন মরুভূমির প্রখর স্বাদমতো সে খাবার যেন অমৃত। আমাদের সে খিচুড়ি কিন্তু অন্ন,এর কিছু ফেলানো যায় না। সেবার জুই পিসির পাতে পড়লো লোহার পেরেক আর তিনি সেটা গিলে আজীবন আমাদের কাছে মিথ হয়ে রইলেন।

 

এদিকে বছরের প্রথম দিন হবে মাছে ভাতে বাঙালির যাত্রা। মা ঠাকুমা বলেন প্রথম দিন ভালো খাইলে সারা বছর ভালো খাওয়া যাবে। প্রথম দিন ভালো পোশাক পরলে সারা বছর ভালো পরা যাবো। অথচ আমাদের সবচেয়ে ভালো জামা ছিলো মেজদির ছোটো হওয়া জামাটা আমার আর বড়দির ছোটো হওয়াটা মেজদির। তবে সকাল সকাল বাবা মাকে প্রণাম করা যেন এই একটা দিনেই পরিপূর্নতা পায়।

 

বাবা দাদা বড় মাছটা কখনোই কেটে আনবেন না; সবাই মাছ দেখবো তারপর কাটা হবে মাছের মুণ্ডু; এটুকু আভিজাত্য তো আমাদের চলতেই পারে। পহেলা মা বৈশাখে মুড়িঘন্ট রাধবেনই; বাটিতে করে সেটি নিয়ে চেটেপুটে খাওয়ার স্বাদ আজন্মের স্বপ্নের মতো। আমরা বাঙালি খাওয়া পড়া নিয়ে ভালো থাকতে চাই। চাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে থাকতে। সংক্রান্তিকাল কেটে যাক,আসুক নব উদ্যমী হওয়ার বৈশাখ।

 

চলতি বছর দৃক পঞ্চাঙ্গ মতের পঞ্জিকা অনুসারে এবং বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত অনুসারে পয়লা বৈশাখ পড়েছে রবিবার ১৪ এপ্রিল। চৈত্র সংক্রান্তি পড়েছে শনিবার ১৩ এপ্রিল। রবিবার থেকেই ১৪৩১ বঙ্গাব্দের সূচনা। তবে সংক্রান্তি ক্ষণ ১৩ এপ্রিল রাত সোয়া নটা নাগাদ। সেই হিসেবেই গোটা রবিবার থাকছে পয়লা বৈশাখ।

সিলেট নিউজ২৪/এসডি.


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Registration Form

[user_registration_form id=”154″]

পুরাতন সংবাদ দেখুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  

বিভাগের খবর দেখুন