সত্যজিৎ দাস:
” নমস্তুভ্যং বিরূপাক্ষ নমস্তে দিব্যচক্ষুষে। নমঃ পিনাকহস্তায় বজ্রহস্তায় বৈ নমঃ৷৷নমঃ ত্রিশূলহস্তায় দণ্ডপাশাসি পাণয়ে । নমঃ স্ত্রৈলোক্যনাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ৷৷ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বর”।
“শিবির তৃতীয় চোখ খুললে পৃথিবী ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে।” সেই কারণে শিব কে সন্তুষ্ট রাখতে বাঙালি হিন্দুরা সর্বদাই তৎপর থাকেন। দেবাদিদেব মহাদেবের মাথা ঠান্ডা রাখতে নিয়ম মেনে ডাবের জল,দুধ ও সাধারণ জল ঢেলে থাকেন শিবলিঙ্গের ওপর।
দেবাদিদেব মহাদেব শিবের মহারাত্রি অন্ধকার দূর করার জন্য এই ব্রত পালন পালিত হয়ে থাকে এবং এই ব্রত পালন করে থাকেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলারা। তার মত স্বামী পাওয়ার উদ্দেশ্যে অনেকেই শিবরাত্রি ব্রত পালন করে থাকেন।
শিবরাত্রির দিন লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ শিবের মাথায় দুধ,ডাবের জল,ঢেলে এবং ফুল ও বেল পাতা দিয়ে শিবের পূজা করেন। সারাদিনের উপবাস করার পর এই ব্রত পালন করে থাকেন তারা।
তবে যারা উপবাস করতে পারেন না, তারা ফল ও জল খেতে পারেন। তবে এই দিনে সারা দিন ও সারা রাতের মধ্যে কোনরকম ভাবে ঘুমানো যাবে না, তার সাথে খারাপ কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া যাবেনা।
তাছাড়া এই পূজার মধ্যে দিয়ে আনন্দ উৎসব পালিত হয়ে থাকে অনেক জায়গায়। এই উপলক্ষে অনেক জায়গায় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ মানুষেরা সেখানে পূজার পাশাপাশি মেলাতে ভীষণভাবে আনন্দ করেন। তার সাথে সাথে ভক্তি ও শ্রদ্ধা মিলিত ভক্তদের মন খুশিতে ভরে ওঠে।
শিবরাত্রি ২০২৪ সময়সূচিঃ-
তারিখ: ৮ মার্চ, ২০২৪ (শুক্রবার)
চতুর্দশী তিথিঃ শুরু: ৭ মার্চ,২০২৪,বিকেল ৫:২৬
শেষঃ ৮ মার্চ,২০২৪,বিকেল ৭:০৯
নিশীথ কালঃ
শুরু: ৮ মার্চ, ২০২৪, রাত ১২:১০
শেষ: ৯ মার্চ, ২০২৪, রাত ১২:৫৯
পারণ সময়: ৯ মার্চ,২০২৪,সকাল ৬:৪৭।
মহাশিবরাত্রির গুরুত্বঃ
এই দিনটিতেই ভগবান শিব ও দেবী পার্বতীর বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। এই দিন ভগবান শিব তাঁর তান্ডব নৃত্য পরিবেশন করেছিলেন।
১) পাপমুক্তির দিন: এই দিন উপবাস ও পূজা করলে পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করা হয়।
শিবরাত্রি পালন করতে গেলে কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা উচিত যা প্রচুর মা-বোনেরা অনেকেই ভুল করে থাকেন।
২) শিবরাত্রি পালনের নিয়মঃ
উপবাস: অনেকে এই দিন নিরামিষ উপবাস পালন করেন।
৩) পূজা: শিবের মন্দিরে গিয়ে পূজা করা হয়।
জাগরণ: অনেকে এই দিন রাত জেগে ভজন-কীর্তন করেন।
৪) উপবাস: অনেকে এই দিন নিরামিষ উপবাস পালন করেন।
৫) পূজা: শিবের মন্দিরে গিয়ে পূজা করা হয়।
৬) জাগরণ: অনেকে এই দিন রাত জেগে ভজন-কীর্তন করেন।
৭) শিবলিঙ্গ স্নান: দুধ, জল, মধু, ঘি ইত্যাদি দিয়ে শিবলিঙ্গ স্নান করানো হয়।
শিবরাত্রির পূজা ও রীতিনীতি:
উপবাস: অনেকে এই দিন নিরামিষ উপবাস পালন করেন।
স্নান: ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান করার পর শিবমন্দিরে যান।
পূজা: শিবলিঙ্গে দুধ, জল, মধু, ঘি ইত্যাদি দিয়ে স্নান করানো হয়।
আরতি: ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য ইত্যাদি দিয়ে ভগবান শিবের আরতি করা হয়।
জাগরণ: অনেকে এই দিন রাত জেগে ভজন-কীর্তন করেন।
শিবরাত্রি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি বিশেষ দিন। এই দিন ভক্তরা ভগবান শিবের পূজা-অর্চনা করে তার আশীর্বাদ লাভ করেন।
শিবের পঞ্চাক্ষরী মন্ত্র অর্থাৎ ওম নমঃ শিবায় জপ করলে জীবনের সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রতিদিন এই মন্ত্র জপ করা উচিত। ওম নমঃ শিবায় মন্ত্রের অর্থ শিবকে নমস্কার করছি। প্রতিদিন ১০৮ বার এই মন্ত্র জপ করা উচিত। এই মন্ত্রের প্রভাবে আপনার ওপর শিবের আশীর্বাদ বজায় রাখে।
জীবনের সমস্ত কষ্ট দূর করার জন্য শিবের রুদ্র মন্ত্র জপ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে ওম নমো ভগবতে রুদ্রায় মন্ত্র জপ করা উচিত। প্রতিদিন এই মন্ত্র জপ করলে মস্তিষ্ক শান্ত হয় এবং সমস্যা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। পাশাপাশি শিব আপনার সমস্ত মনস্কামনা পূরণ করেন।
হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে শক্তিশালী মন্ত্রের মধ্যে অন্যতম হল শিব গায়ত্রী মন্ত্র। এটি গায়ত্রী মন্ত্রের এক রূপ। যা জপ করলে মানসিক শান্তি লাভ করা যায়। মস্তিষ্ক সঠিক পথে কাজ করতে শুরু করে। এর ফলে সহজে সমস্য়ার সমাধান করা যায়। শিবকে প্রসন্ন করার জন্য শিব গায়ত্রী মন্ত্র উচ্চারণ করুন। এটি হল– ওম তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবয় ধিমহি তন্নো রুদ্রা প্রচোদয়াত।
শিব ধ্যান মন্ত্র জপ করে শিবের কাছ থেকে নিজের কর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে পারেন। মন্ত্রটি হল করচরণকৃতং বা কায়জং কর্মজং বা শ্রবণায়ংজং বা মনসম বা পরধম মৈং বিহিতং বিহিতং বা সর্ব মেটাত ক্ষমাস্ব জয় জয় করুণাব্ধে শ্রী মহাদেব শম্ভো।। এই ধ্যান মন্ত্র জপ করলে ভোলানাথ নিজের ভক্তের সমস্ত দুঃখ দূর করেন। এর ফলে আপনার জীবনে কষ্ট কমতে শুরু করে।
একাদশ রুদ্র মন্ত্রের মধ্যে ১১টি মন্ত্র অন্তর্ভূক্ত। শিবরাত্রি বা মহা রুদ্র যজ্ঞের সময় শিবের এই মন্ত্র জপ করা হয়ে থাকে। তবে প্রতিদিন এই মন্ত্রোচ্চারণ করতে পারেন। জপের কিছু দিনের মধ্যে নিজে থেকেই একাদশ রুদ্র মন্ত্রের প্রভাব লক্ষ্য করতে পারেন।
শিব মন্ত্রঃ
” কপালী- ওম হম হম সতরুস্তংভনয় হম হম ওম ফট
পিঙ্গলা- ওম শ্রীং হীং শ্রীং সর্ব মঙ্গলায় পিঙ্গলায় ওম নমঃ
ভীম- ওম এং মনো বঞ্চিতা সিদ্ধায় এম এং ওম
বিরুপাক্ষ- ওম রুদ্রায় রোগনাশায় আগাচা চা রাম ওম নমঃ
বিলোহিত- ওম শ্রীং হীং সৈম সৈম হীং শ্রীং শঙ্করশনায় ওম
ষষ্ঠ- ওম হীং হীং সফলায়ৈ সিদ্ধয়ে ওম নমঃ
অজপাড়া- ওম শ্রীং বম সোফ বলবর্ধনায় বালেশ্বরায় রুদ্রায় ফূট ওম
অহির্ভূদন্যা- ওম হরং হীং হম সমস্ত গ্রহ দোষ বিনাশ ওম শম্ভু- ওম গম হ্লুআং শৌং গ্লৌং গম ওম নমঃ “
সিলেট নিউজ২৪,/এসডি.