✍️রূমা মোদক ✍️
বিশিষ্ট সাহিত্য- সাংস্কৃতিক কর্মী
সত্যজিৎ দাস,বাহুবল(সংবাদ প্রতিনিধি)
আমি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত কয়েক দশক ধরে। জাতীয় দৈনিক থেকে শুরু করে লেখালেখির প্রায় সব মাধ্যমেই আমার সরব উপস্থিতি রয়েছে এবং খুব শক্তিশালী উপস্থিতি নাট্যাঙ্গনেও রয়েছে। ১৯৭১ সালে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের বিস্তীর্ণ ভাটি অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ত্রাস হিসেবে পরিচিত শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতির বীরত্ব গাঁথা নিয়ে আমার লেখা নাটক প্রশংসা কুড়িয়েছে সব মহলেই। মঞ্চ নাটকে অবদানের জন্য পেয়েছি বিভিন্ন সম্মাননাও। আমি এসেছিলাম নিউইয়র্কে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের বইমেলায় যোগ দিতে।
আমার লেখালেখির বয়স খুব কম নয়; প্রায় ৩০ বছর। স্কুল জীবন থেকেই লিখছি। মাঝে সংসার ও সন্তানের জন্য স্বল্প সময়ের বিরতি। তারপর আবার লেখার জগতে ফিরে আসা। আমার থিয়েটার চর্চা রাজধানীর বাইরে। রাজধানীতেই কেবল ভালো থিয়েটার হয় এই ধারণা ভুল। আমি ও আমার সহপাঠীরা মিলে মফস্বল থেকে নাট্যবোধ সৃষ্টির কঠিন কাজটি যথাসম্ভব সফলভাবে করতে পেরেছি। ভালো নাটকের আবেদন ও আয়োজন সীমানা পেরিয়ে রাজধানীর গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। এর কৃতিত্ব শুধু আমার একার নয়, হবিগঞ্জের নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নাটক পাগল কর্মীদের সবার। হবিগঞ্জের নাট্য আন্দোলন এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। রাজধানীর বাইরে থিয়েটারের কথা বলতে গেলে সবাই । কিন্তু আজকের এই অবস্থানে নিজেদের নিয়ে আসার পথটা খুব মসৃণ ছিল না। এখনো প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়। কিন্তু এর মধ্যেও ভালো নাটক পরিবেশনের লক্ষ্যে কর্মীদের জন্য অনিয়মিতভাবে হলেও বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এর মাধ্যমে এক ধরনের সম্পৃক্ততা তৈরি হয়, যা নাটকের সঙ্গে জড়িত সবাইকে উজ্জীবিত করে।
সাহিত্য চর্চা ও নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে একই সাথে যুক্ত থাকার পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিজস্ব সংবেদনশীলতা ও দায়বদ্ধতাও অবশ্যই আছে। জাতীয় সব কয়টি দৈনিক, ঈদসংখ্যা ও জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টালে নিয়মিত লেখালেখি করি।
মঞ্চেও নিয়মিত কাজ চলছে। আমি মনে করি মঞ্চ আমার মূল চর্চার জায়গা। একজন সৃষ্টিশীল মানুষের সংবেদনশীলতা এবং তদজাত দায়বদ্ধতা কখনো ফুরিয়ে যায় না। ফলে প্রতিনিয়ত নতুন সৃষ্টির তাড়না সামনে এসে হাজির হয়।
সাহিত্য ও নাট্যজগতের সঙ্গে আমার এত দিনের সম্পৃক্ততার পেছনে নিজের তাড়নার পাশাপাশি কাজ করেছে কিছু স্বীকৃতিও। থিয়েটার চর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ তনুশ্রী পদক, জাকারিয়া পদকের মতো সম্মাননা পেয়েছি আমি। আমি গল্পের জন্য ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ভালোবাসার সেরা গল্প, বৈশাখী টিভি সেরা গল্পকারের পুরস্কারও অর্জন করেছি। এখনো কোনো জাতীয় পুরস্কার না পেলেও এ নিয়ে আপাতত ভাবনা নেই আমার। কারণ সবগুলো জাতীয় পত্রিকায় আমার লেখা গুরুত্বের সঙ্গেই প্রকাশ করতেছেন প্রিয় সংবাদ মাধ্যম কর্মীরা। প্রতিনিয়ত পাঠকের প্রতিক্রিয়া জমা হচ্ছে। এই সব কিছুকেই বড় অর্জন হিসেবে আমি মনে করি। “যতটা পেয়েছি,সবটুকুই অর্জন”।
নিউইয়র্ক বইমেলা আমার জীবনের এক বিশাল অভিজ্ঞতা। এখানে এসে দেশের অনেক গুণীজনের সঙ্গে সৃষ্টিশীল চিন্তার বিনিময় করতে পেরেছি, যা অনেক দুর্লভ ও মূল্যবান বলে মনে করি। সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসের নিবেদিতপ্রাণ অসংখ্য সাংস্কৃতিক কর্মীকে যেভাবে উৎসাহ নিয়ে কাজ করতে দেখেছি, তা আমাকে ভীষণভাবে গর্বিত করেছে। নাটক নিয়ে বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের নাটক নিয়ে বড় পরিকল্পনা রয়েছে আমার। নাটক নিয়ে নতুন কিছু করবার পরিকল্পনা সব সময়ই থাকে আমার চিন্তাভাবনায়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কাজ করার স্বপ্ন আমার। আমাদের ভাটি অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতিকে নিয়ে একটি কাজ করেছি।
কিন্তু আমি এখানে থেমে যেতে চাই না। আরও অনেক নাম না-জানা মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বগাঁথা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করতে চাই। এ ছাড়া এখনো রাজধানীর বাইরে নানা স্থানে সমাজের নানা শ্রেণিপেশার শ্রমজীবী নারী-পুরুষের প্রতি অনেক ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। আমার উদ্দেশ্য হলো নাটক ও লেখার মাধ্যমে সমাজের নানা সংঘাতপূর্ণ বিষয় সামনে নিয়ে আসা।