সুমাইয়া আক্তার শিখা স্টাফ রিপোর্টার
এক বছর পার হলেও স্ত্রীর বিচ্ছেদ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে ঢাকায় নিহত কুষ্টিয়া হালসার যুবক রাজুর হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ধার হলোনা। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে রাজুর পিতা-মাতা পাগল প্রায়। স্ত্রীর পরকীয়ায় পরিকল্পিতভাবে শামীম সুলতান রাজুকে হত্যার বিচার চায় নিহতের পরিবার। নিহতের এক বছর পার হলেও তার বিচার চেয়ে পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা যায়, গত ২০২০ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকা নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জ রাজউকের নির্মাণাধীন পূর্বাচল ১৮ নম্বর সেক্টরের ৪৫ নং ব্রীজের রেলিং থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন সকালে সেখানে এলাকার লোকজন গরু চরাতে গেলে তারা ঝুলন্ত লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয়। রুপগঞ্জ থানা পুলিশ সেখানে লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে তার পকেটে থাকা ভোটার আইডি কার্ড ও কর্মক্ষেত্রের পরিচয়পত্র পান। সেই পরিচয় অনুযায়ীই নিহতের আত্মীয় স্বজনদের কাছে সংবাদ পাঠানো হয়। পরে নিহতের আত্মীয় স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
সে কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের হালসা বাজারের মো: ফজলুর রহমানের ছেলে। তিনি কম্পিউটার সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।
নিহত শামীম সুলতান রাজু, ঢাকা মিরপুর কাফরুল থানার উত্তর কাজী পাড়ার রুহুল আমিনের ছেলে ইসমাঈলের মালিকানাধীন একটি মেসে ভাড়া থাকতেন।
তিনি আরআর এফ নামীয় একটি প্রতিষ্ঠানে অর্থনৈতিক বিভাগের প্রধান হিসাব কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজও করেন। বিদেশী সংস্থার সাথে আউট সোর্সিং কাজও করেন।
নিহত রাজুর পিতা-মাতার দাবী, তার সন্তানকে স্ত্রীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে দূষ্কৃতকারীরা।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ধর্মদহ গ্রামের মৃত ইছাহক আলীর কন্যা ইশিতার সাথে রাজুর গত ২০১৭ সালের ২২শে অক্টোবর বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ইশিতা কুষ্টিয়ার একটি ম্যাটসে অধ্যানরত ছিলো। স্বামী শামীম সুলতান রাজু তাকে সকল সহযোগিতা দিয়ে পাশ করিয়ে স্ত্রীকে ঢাকায় নেন।
ঢাকায় গার্মেন্টস বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে চাকুরীও দেন স্বামী রাজু। চাকুরী দেয়ার পর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা শুরু হয় । অবাধ্য হয়ে যায় স্ত্রী ইশিতা। পরকীয়া সম্পর্কের কারণেই তার সন্তান শামীম সুলতান রাজুর সাথে প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করতো। পারিবারিকছোটখাটো কোন বিষয়কে সে বড় করেতুলে স্বামী ও তার পরিবারের মাঝে চরম দ্বন্দ্ব বাঁধিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে ওই মেয়েটিই রাজুকে ডিভোর্স দেয়।
এরপরও স্ত্রীর ভুল সিদ্ধান্তকে সংশোধন করে সংসার করার চেষ্টা করে রাজু। কিন্তু স্ত্রী ঈশিতা স্বামী রাজুর সাথে ছলনা শুরু করে। স্বামীর সব কিছুর সুযোগ সুবিধা নিলেও প্রতারকের মতো অভিনয় করতে থাকে।
ছলনাময়ী মেয়েটি প্রেমের আড়ালে তার স্বামীকে সরাতে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করে। বিষয়টি রাজুর কাছে স্পষ্ট হলেও মেয়েটিকে পরকীয়া থেকে ফেরাতে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
একদিকে উভয় পরিবারকে বিষিয়ে তোলার সমস্যার সমাধান। অপরদিকে স্ত্রীর পরকীয়ার আগুন। সব সমস্যা মিলিয়ে রাজুকে অগ্নি দগ্ধ করে তোলে। এসমস্যা নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে রাজু তার ফেসবুক আইডিতে একটি পোষ্টও দেন।
ফেসবুকে পোষ্ট দেওয়ার পরই রাজুর স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
পরকীয়া পুরুষ ও রাজুর বন্ধুদেরনিয়ে চক্রান্ত করে। ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল রাজুকে পিটিয়ে হত্যা করে ওই লাশ ঝুঁলিয়ে রাখে।
রাজুর পরিবার জানান, রাজুর লাশের শরীরে এসিডের দাগ, পায়ে- পিঠে, বগলে পিটানোর জখম। মুখের এক সাইডে আঘাতের চিহৃ। একটি হাত ভাঙা। যা ঝুলন্ত লাশের ছবিতে একটি হাতও বাঁকা দেখা যাচ্ছে। লাশ ধোয়ানোর পরও হাতটি ভাঙা দেখা যায়। পুরুষাঙ্গে আঘাতের চিহৃ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে ঢাকা নারয়নগঞ্জের রুপগঞ্জ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়।
ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন এস আই ফরিদ।
তিনিও জানান, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহৃ, দাঁতগুলো ভাঙা ও একটি হাঁত ভাঙা পাওয়া গেছে। তবে লাশের পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট পেলেই পুরোপুরিভাবে বিষয়টি বলা যাবে ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারনেই রিপোর্টটি আত্মহত্যা বলে জানানো হয়। ওই সময় দেশে করোনা প্রচন্ড প্রকোপ থাকায় সে বিষয়ে নড়াচড়া করতে পারেনি নিহত রাজুর পরিবার। অন্যদিকে প্রশাসনিক কোনসহযোগিতা না পেয়েও হতাশ হয়েছে নিহতের পরিবার। ইতিমধ্যেই পার হয়ে গেছে এক বছর। এ হত্যাকান্ডের রহস্য অজ্ঞাতই রয়ে গেছে।
এ ঘটনাটি হত্যা না, আত্মহত্যা তা নিয়ে জাতীয় পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক আমার সংবাদসহ বেশ কিছু পত্রিকায় এবং কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হয়। বিষয়টি তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু বিচার চান শামীম সুলতান রাজুর পরিবার।