সত্যজিৎ দাস(স্টাফ রিপোর্টার):
বাংলাদেশে প্রায় ৯০ প্রজাতির সাপ আছে এবং এই সাপের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সাপ নির্বিষ।তবে বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ, ২৫ তম খণ্ডে Reptilia শ্রেণিতে Squamata বর্গে ৭টি পরিবারে ৪৬টি গণে মোট ৯১টি প্রজাতির যেগুলোকে দেশবাসি সাপ বলে ডাকে সেই ৯১টি প্রজাতি এবং বাংলাদেশের সাপের তালিকায় পরবর্তীতে যুক্ত অন্য তিনটি প্রজাতির পরিবারসহ মোট ৯৪টি প্রজাতির নামের তালিকা নিম্নে প্রদান করা হলো। উল্লেখ্য বাংলাদেশে প্রাপ্ত বিষহীন সাপের পরিবারের মধ্যে আছে টিফলোপিডি, বোইডি, অ্যাক্রোকোরিডি, পাইথনিডি। এছাড়াও কলুব্রিডি পরিবারেরর প্রাপ্ত অধিকাংশ সাপই নির্বিষ। এছাড়া বাংলাদেশের প্রাপ্ত বিষধর সাপসমূহ মূলত এলাপিডি পরিবারভুক্ত। এছাড়াও কিছু ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত, এবং সামুদ্রিক হাইড্রোফিডি পরিবারভুক্ত সাপও দেখা যায়।
শঙ্খিনী বা ভোতালেজ কেউটে বা ডোরা কাল কেউটে বা ডোরা শঙ্খিনী বা শাঁখামুটি (ইংরেজি: Banded Krait) বৈজ্ঞানিক নাম: Bungarus fasciatus) হচ্ছে এলাপিডি পরিবারভুক্ত এক প্রকার বিষধর সাপ। এটি Bungarus গণের আওতাভুক্ত। এই সাপের বিস্তৃতি দেখা যায় ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়।এটি কেউটে সাপের ভেতরে সবচেয়ে দীর্ঘ এবং এটির সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য হতে পারে ২.১ মি (৬ ফু ১১ ইঞ্চি)।
শঙ্খিনীদের সহজেই চিহ্নিত করা যায় তাদের সুপরিচিত কালোর মধ্যে হলুদ ডোরা দিয়ে। তবে হলুদের মধ্যে মাথা হতে লেজ পর্যন্ত সোজা কালো ডোরাও দেখে গেছে যদিও তা বিরল খুব। শঙ্খিনী/ডোরা কাল কেউটে সাপের দৈর্ঘ্য ১৫০ সেমি, সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ২২৫ সেমি পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে। সাপটি বেশ বড় হলেও সাপটির লেজের অংশটি ছোট ও ভোতা। সদ্য প্রস্ফুটিত অবস্থায় এদের দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ৪০ সেমি উল্লেখ করা হয়েছে।এই সাপটি সাধারনত মানুষ দেখলে পালানোর চেষ্টা করে। মাথা ঝোপ বা মাটির মধ্যে লুকিয়ে রাখে। তখন ভোতা লেজটিকে অনেকে মাথা ভেবে ভুল করে।শান্ত ও লাজুক স্বভাবের।সাধারণত মানুষ এড়িয়ে চলে।এমনকি বিরক্ত করলে শরীর পেঁচিয়ে মাথা শরীরের নিচে লুকিয়ে রাখে।বলা যায় মানুষের জন্য হুমকিস্বরুপ নয় মোটেও।তবে শিকারে বেশ দ্রুত। অন্য সাপ খায় বিশেষ করে রাসেল ভাইপারের মত বিষাক্ত সাপগুলিও। কাল কেউটে সাপ সমতল ভূমির উন্মুক্ত স্থানে বাস করে। তবে পাহাড়ি জলস্রোতেও এদের দেখা যায়। এরা ধীর গতিসম্পন্ন এবং তীব্র বিষ ধারণ করে। স্ত্রী সাপ এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৪ থেকে ১৪টি ডিম দেয় এবং ডিমের পরিস্ফুটনকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে। ডিমের পরিস্ফুটনের জন্য ৬১ দিন সময় লাগে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে এক বসতঘরের সামনের উঠান থেকে একটি শঙ্খিনী সাপ উদ্ধার করছে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। সাপটি প্রায় সাড়ে ৩ ফুট লম্বা।
গত বৃহস্পতিবার(০৪ নভেম্বর) রাত ১০টায় কমলগঞ্জ উপজেলার মণিপুরী অধ্যুষিত তিলকপুর উত্তরপল্লী এলাকার মুকন্দ সিংহের বসতবাড়ির উঠানের এক ফুলগাছের ঝোপে সাপটিকে দেখতে পেয়ে বন বিভাগকে খবর দিলে তারা গিয়ে সেটি উদ্ধার করে।শঙ্খিনী এমনি একটি সাপ যার ভয়ে অন্য সাপ পালিয়ে যায়।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘সাপটি উদ্ধার করা হয়েছে। সাপটি সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। বর্তমানে সাপটি বন্যপ্রাণী রেসকিউ সেন্টারে রাখা হয়েছে। শুক্রবার(০৫ নভেম্বর ২০২১) বিকেলে শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়েছে ‘।
উল্লেখ্য যে,বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে ডোরা কাল কেউটে সাপকে বাংলাদেশের আবাসিক সাপ হিসেবে ধরা হয়েছে। এ প্রজাতির সাপ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ব্যাপক বিস্তৃত। এরা ভারত,নেপাল,ভুটান, মায়ানমার,চীন,থাইল্যান্ড,সিঙ্গাপুর,কম্বোডিয়া, লাওস,ম্যাকাও,ভিয়েতনাম,মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনেই অংশে পাওয়া যায়।
আইইউসিএন এটিকে বাংলাদেশে বিপন্ন এবং বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচনা করে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।