বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৫ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

শান্তি চুক্তির ২৫ বছরেও দুই-তৃতীয়াংশ দাবী বাস্তবায়ন হয়নি।

SATYAJIT DAS / ১৭১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২২

সত্যজিৎ দাস:

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য অঞ্চলকে অন্ধকারমুক্ত করতে সরকার (তৎকালীন আওয়ামিলীগ সরকার) সঙ্গে চুক্তি ক‌রে‌ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। সেই চুক্তির ২৫ তম বর্ষপূর্তি আজ। চুক্তির আগে ও পরে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম (বান্দরবান,চট্টগ্রাম,রাঙামাটি) এবং এখানে বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিসহ ১২টি জাতিসত্তার উন্নত জীবনমানসহ তিন পার্বত্য জেলার উন্নয়নের ব্যাপক কার্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে। সরকারের প্রচেষ্টায় দুর্গম অঞ্চলগুলোতে পৌঁছাচ্ছে শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন হয়েছে। এসব উন্নয়নে মানুষের জীবনযাত্রার মানেও এসেছে আমূল পরিবর্তন।

তবে পাহা‌ড়ের বাসিন্দারা বলছেন,শা‌ন্তি চু‌ক্তির প‌রে পাহা‌ড়ে উন্নয়ন হ‌য়ে‌ছে রাস্তাঘাট ও সরকারি স্থাপনাগু‌লোর। কিন্তু মানুষের জীবনে তেমন পরিবর্তন হয়নি। নিত্যপণ্যের দাম বে‌ড়ে‌ছে ক‌য়েকগুণ। ফ‌লে ছে‌লে‌মে‌য়ে‌দের লেখাপড়ার খরচ চা‌লি‌য়ে সংসা‌র চালা‌তে হিম‌শিম খা‌চ্ছেন তারা। অ‌নে‌ক পরিবা‌রে ছে‌লে‌মে‌য়ে‌দের লেখাপড়া ব‌ন্ধের উপক্রম হ‌চ্ছে।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন,বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ও বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যৌথ বিবৃতিতে বলেছে,’পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। “এই চুক্তি ২৫ বছরেও যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় পাহাড়ে কাঙ্ক্ষিত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং পরিস্থিতি বছরের পর বছর জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে।” পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ সরকার একটানা ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকেও ওই চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি বলেও অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে।

এতে বলা হয়,“সরকারের পক্ষ থেকে ৭২টি বিষয়ের মধ্যে ৪৮টি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে,যা অসত্য এবং অপপ্রচার মাত্র। বাস্তবিকপক্ষে চুক্তির ২৫টি বিষয় বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র। মৌলিক বিষয়সহ এখনও চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ বিষয় অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে।”

উল্লেখ্য যে,১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর খাগড়াছড়িতে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতির প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও সাংসদ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ৭২ দফার একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

১৯৯৭ সালের এই দিনে শান্তিচুক্তির পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি মূলধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং বর্তমানে দলটির প্রধান হলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ছোট ভাই জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। তিনি একই সাথে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি শান্তি চুক্তির পূর্ণ ও যথাযথ প্রয়োগের জন্য আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে এবং সরকার চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন করছে না বলে অভিযোগ করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জে.এস.এস) হলো বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল যা চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের উপজা‌তি‌দের অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি স্বায়ত্তশাসন ও জাতিগত পরিচয়ের স্বীকৃতি এবং পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতির অধিকারের জন্য লড়াই করে আসছে। ১৯৭৫ সালে দলটির সামরিক শাখা শান্তি বাহিনীর যাত্রা শুরু হয় যারা সাধারনত সরকারি বাহিনী ও বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের সাথে লড়াই করে আসছে। শান্তি বাহিনীকে নিরস্ত্রীকরন ও জে.এস.এসকে রাজনীতির মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য ১৯৯৭ সালে সরকারের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে আধুনিক সংঘাত শুরু হয় যখন স্থানীয় জনগণের রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা শুধুমাত্র বাঙালি সংস্কৃতি ও ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিককে বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করার সরকারি নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। চাকমা রাজনীতিবিদ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনায়,দেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জোর দিয়েছিলেন যে পার্বত্য অঞ্চলের নৃ-গোষ্ঠীরা বাঙালি পরিচয় গ্রহণ করবে। শেখ মুজিব উপজা‌তি‌দের সংখ্যালঘুতে পরিণত করার জন্য পার্বত্য অঞ্চলে বাংলাভা‌ষী নাগ‌রিক‌দের বসতি স্থাপনের হুমকিও দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। ফলস্বরূপ,মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এবং অন্যান্যরা ১৯৭৩ সালে সমস্ত উপজাতির একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে পার্বত্য ছাত্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি (PCJSS) প্রতিষ্ঠা করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Registration Form

[user_registration_form id=”154″]

পুরাতন সংবাদ দেখুন

বিভাগের খবর দেখুন