এম. এম আতিকুর রহমান ঃ
যুগে যুগে কিছু মহৎপ্রাণ মানুষ আছেন, যারা আপন যোগ্যতায় ও মহিমায় জ্বলে থাকেন আকাশের ধ্রুবতারা হয়ে, একান্ত লোক চক্ষুর আড়ালে, নীরবে, নিভৃতে থাকেন। এদের মধ্যে নেই আমিত্বের অহমিকার বহিঃপ্রকাশ। নিতান্ত প্রচার বিমুখ মানুষগুলো থেকে যান মানুষের দৃষ্টিরেখার বাইরে।এমনই একজন প্রচার বিমুখ আলোকিত মানুষ আতাউর রহমান আতা (দাসের বাজার ইউনিয়নের বার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম শফিকুর রহমানের ছোটভাই এবং বড়লেখার ইতিহাসে সম্ভবতঃ প্রথম সিএসপি এম এ মজিদের আপন ভাতিজা)। বড়লেখার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ এফআর মুহিউস সুন্নাহ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটের সাবেক কাউন্সিল ফয়জুর রহমানের ছোট ভাই।
যিনি বিলেতের মাটিতে বৃহত্তর সিলেটের একজন গর্বিত সন্তান হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। বড়লেখাবাসীর গর্বের নাড়ীছেড়া ধন এই মানুষটি ১৯৫৮ সালে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সুড়িকান্দি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল জীবনের পরেই ১৯৭০ সালে তিনি তার পরিবার পিতা- মাতার সাথে ব্রিটেনে পাড়ি জমান। তিনি ব্রিটেনের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেন- Yorkshire, London, Newcastle, Buckinghamshire, এবং Northumberland. শিক্ষা জীবন সমাপ্তির পর তিনি লন্ডনের Tower Hamlet এর সাথে সংযুক্ত হন এবং স্থানীয় সরকারের অধীন Social Service Department এ কাজ করেন। তিনি একই সাথে তার পেশাগত শিক্ষাও চালিয়ে যান এবং অক্সফোর্ড এর Ruskin কলেজ হতে Certificate in Qualified Social Work ( CQSW) সম্পন্ন করেন। সত্তরের দশকের শেষের দিকে তিনি গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং লেবার পার্টির বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে। তখন তিনি বিভিন্ন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বে চলে আসেন-যেমন Bangladesh Youth Organization,Tower Hamlets Association for Racist Equalities,Mitali Housing Association ইত্যাদি। একই সময়ে তিনি স্থানীয় লেবার পার্টির গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকে ১৯৯৪ ইং সনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তখন লেবার পার্টি পূর্ব লন্ডনে ক্ষমতায় এলে তিনি দ্রুততার সাথে নেতৃত্বের পাদপ্রদীপে চলে আসেন এবং কেবিনেটের সদস্যপদ লাভ করেন। তিনি ফাইন্যান্স কমিটি এবং অডিট প্যানেলের সভাপতি মনোনীত হন (১৯৯৫-১৯৯৬) এ।
সোসাল সার্ভিস কমিটির সভাপতি মনোনীত হন (১৯৯৬-১৯৯৭) এ এছাড়াও Performance Management Working Party এর সভাপতি মনোনীত হন (১৯৯৭- ৯৮)তে অত্যন্ত সফলভাবে, (১৯৯৯-২০০০) এ কেবিনেট সদস্য হিসেবে ফাইন্যান্স ও অডিট প্যানেলে দায়িত্ব পালন করেন।(২০০০-২০০৩) এ কেবিনেট মেম্বার হিসেবে ও দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট সংস্থার সম্মুখ সারিতে থেকে নেতৃত্ব দানের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন।এগুলোর মধ্যে তিনি পরিচালক ছিলেন, Tinkerbel Trust (1996-1997) এ, পরিচালক Bethnal Green City Challenge company (1994-1995) এ পরিচালক Spitalfield Market. Community Trust (1994-1997) এ, পরিচালক Mile and Par Partnership 2000 (-2003) এ, পরিচালক কাচারাল ইন্ডাষ্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি – CIDA (2000-2003) এ, সভাপতি বৈশাখী মেলা (২০০০-২০০৩)এ, সভাপতি নজরুল সেন্টার শেডো বোর্ড(২০০০-২০০৩) এ।
ব্যক্তি জীবনে আতাউর রহমান বেগম হাসনা রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মিসেস রহমানও একজন নিঃস্বার্থ সমাজকর্মী।
সর্বশেষ তিনি বড়লেখাবাসীর মানবসেবার অনন্য সংগঠন, বড়লেখা ফাউন্ডেশন ইউকে এর অভিভাবকের ভুমিকায় উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। অত্যন্ত সদালাপী, নিরহংকার, সজ্জন এ মানুষটি অনেকটা পর্দার আড়ালে থেকে নিভৃতে মানবতার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এমন একজন গুণীজনকে নতুন প্রজন্মের কাছে বহু আগে পরিচিত করানো প্রয়োজন ছিল। তাঁর ক্যারিয়ার ও জীবন থেকে নতুন প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে। কথায় আছে, যে দেশে গুণীজনের কদর নাই, সেই দেশে গুণীজন জন্মায় না।
আমরা আমাদের এই কৃতি সন্তানকে স্বশ্রদ্ধ অভিবাদন জানাই। বড়লেখায় অগনিত আলোকিত আতাউর রহমানের জন্ম হোক বার বার, এ প্রত্যাশা। তাঁর দীর্ঘ নেক হায়াত কামনা করি। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন পরিবার- পরিজনসহ এই ফরিয়াদ দয়াময় মাবুদের তরে মনেপ্রাণে।