বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৯ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

গুরু পূর্ণিমার গুরুত্ব ও তাৎপর্য।

সত্যজিৎ দাস / ২০১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার:
” যোহ্যস্মাকং গুরুশ্রেষ্ঠঃ কৃষ্ণদ্বৈপায়নো মুনিঃ।
জগৌ পরমকং জপ্যং নারায়ণমুদীরয়ন্ “

‘গুরু’ শব্দটি ‘গু’ এবং ‘রু’ এই দুটি সংস্কৃত শব্দ দ্বারা গঠিত; ‘গু’ শব্দের অর্থ “অন্ধকার”/”অজ্ঞতা” এবং ‘রু’ শব্দের অর্থ “যা অন্ধকারকে দূরীভূত করে”। অর্থ্যাৎ ‘গুরু’ শব্দটি দ্বারা এমন ব্যক্তিকে নির্দেশ করা হয় যিনি অন্ধকার দূরীভূত করেন। শিবের থেকে সমগ্র সনাতন ধর্মশাস্ত্র প্রকটিত হয়েছে বলে জানা যায়। তাই শিব আদিগুরু বলে জগদবিখ্যাত। তার শাস্ত্রজ্ঞানের দ্বারা জীব উদ্ধার হয়,তাই তার দক্ষিণমুখ কে দক্ষিণামূর্তি বলে। এই রূপেই তিনি পরমগুরু। গুরু পূর্ণিমা সনাতন হিন্দু ধর্মীয় ঐতিহ্য অনুসারে পালিত একটি গুরুমূলক উৎসব,যাতে শিবের রূপে জগতের সমস্ত আচার্য দের “গুরু পূজা” সম্পন্ন করা হয়।

হিন্দু সনাতন শাস্ত্র মতে,এই তিথি তে পরমেশ্বর শিব দক্ষিণামূর্তিরূপ ধারণ করে ব্রহ্মার চারজন মানসপুত্র কে বেদের গুহ্য পরম জ্ঞান প্রদান করেছিলেন,পরমেশ্বর দক্ষিণামূর্তি সকলের আদি গুরু,তাই এই তিথি টি পরমেশ্বর শিবের প্রতি সমর্পিত। এছাড়া এই দিন ‘মহাভারত’ রচয়িতা মহির্ষি বেদব্যাস জন্মগ্রহণ করেছিলেন মুনি পরাশর ও মাতা সত্যবতীর ঘরে; ফলে এই দিনটিকে কখনো কখনো ‘ব্যাস পূর্ণিমা’-ও বলা হয়।

শাস্ত্রমতে বেদব্যাসকে হিন্দু ধর্মে বিশ্বের গুরু হিসেবে দেখা হত। কথিত রয়েছে নিজের পাঁচ শিষ্যকে নিয়ে গুরু শিষ্যের সম্পর্ক অটুট রাখতে গুরু পূর্ণিমার প্রচলন করেছিলেন ব্যাসদেব। আবার এই গুরুপূর্ণিমার গুরুত্ব রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মেও। উত্তরপ্রদেশের সারনাথে গৌতম বুদ্ধর প্রথম ৫ শিষ্যকে বৌদ্ধধর্মের উপদেশ দেওয়ার পরম্পরাকে সঙ্গে নিয়েই গুরু পূর্ণিমা পালিত হয়। এই দিনে গুরু ও শিষ্যের সম্পর্ককে উদযাপিত করা হয় বলে জানা যায় সেই ধর্মে।

আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা অর্থাৎ রথযাত্রার পরের পূর্ণিমাটিই গুরুপূর্ণিমা রূপে চিহ্নিত হয়েছে শাস্ত্রে। ষোলোকলায়য় পূর্ণ একটি আস্ত চাঁদযুক্ত তিথি হল পূর্ণিমা। সম্পূর্ণতার প্রতীক। সম্পূর্ণতা না থাকলে আরাধ্যকে পাওয়া যায় না। সম্পূর্ণতার মূর্তপ্রতীক পূর্ণিমা। আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিটি শ্রীকৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসদেব-এর আবির্ভাব তিথি। অর্থাৎ এটি হল ব্যাসপূর্ণিমাও। জীবনের যিনি মহাত্মা,তাকেই আজ স্মরণের দিন,সাধনের দিন।

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে,গুরু পূর্ণিমা তিথি শুরু হয়েছে বুধবার(১৩ জুলাই) ভোর ৪ টে ০২ মিনিটে৷ এই তিথি থাকবে রাত ১২ টা ০৮ মিনিট অবধি৷ গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকা অনুসারে গুরু পূর্ণিমা তিথি শুরু হয়েছে মঙ্গলবার(১২ জুলাই) রাত ২ টো ৫৭ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডে ৷ এই তিথি থাকবে রাত ১২ টা ২৮ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড পর্যন্ত ৷ শ্রদ্ধা সহকারে গুরুকে আরাধনার পাশাপাশি এই তিথিতে পূর্ণিমার ব্রত-উপবাস ও নিশিপালন করা হয়ে থাকে ৷

গুরু পূর্ণিমার পূজা পদ্ধতিঃ- আজকের দিনে ঘর পরিষ্কার করার পর স্নান করে পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা উচিত। একটি পরিষ্কার স্থান বা উপাসনালয়ে একটি সাদা কাপড় বিছিয়ে একটি ব্যাস পীঠ তৈরি করুন এবং বেদ ব্যাসের একটি মূর্তি বা ছবি স্থাপন করুন। এরপর চন্দন, ফুল, ফল ও প্রসাদ নিবেদন করুন। এই দিনে,বেদ ব্যাসের সঙ্গে শুক্রদেব এবং শঙ্করাচার্যের মতো গুরুদেরও আবাহন করা উচিত। এই দিনে শুধু গুরুকেই নয়, পরিবারের বড়দের যেমন বাবা-মা, ভাই-বোনকে গুরু হিসেবে বিবেচনা করে তাদের আশীর্বাদ নিতে হবে।

গুরু পূর্ণিমার তাৎপর্যঃ- মহর্ষি বেদ ব্যাস,যিনি পৌরাণিক যুগের মহান ব্যক্তিত্ব,ব্রহ্মসূত্র,মহাভারত, শ্রীমদ ভাগবত এবং অষ্টম পুরাণের মতো চমৎকার সাহিত্য রচনা করেছিলেন,আষাঢ় পূর্ণিমায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাকে আদি-গুরু হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গুরু পূর্ণিমার এই বিখ্যাত উৎসবটি ব্যাস দেবের জন্মবার্ষিকী হিসাবেও পালিত হয়। এই দিনে, আমাদের উচিত ব্যাস দেবের অংশ হিসাবে আমাদের গুরুদের পূজা করা। গুরুর কাছ থেকে মন্ত্র প্রাপ্তির জন্যও এই দিনটিকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। এই দিনে গুরুজনদের সেবা করার অনেক গুরুত্ব রয়েছে।

আজ ইন্দ্র যোগ গঠিত হচ্ছে। বিশ্বাস অনুসারে,দীর্ঘ সময় ধরে আপনার কাজে কোনও বাধা থাকলে,ইন্দ্র যোগে প্রচেষ্টা করলে সাফল্য পাওয়া যায়। এই ধরনের প্রচেষ্টা শুধুমাত্র সকাল,বিকাল এবং সন্ধ্যায় করা উচিত। ইন্দ্র যোগ বুধবার(১৩ জুলাই) দুপুর ১২টা ৪৪ মিনিট পর্যন্ত ছিলো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Registration Form

[user_registration_form id=”154″]

পুরাতন সংবাদ দেখুন

বিভাগের খবর দেখুন