রেখা পাঠক:
ভারতীয় জ্যোতিষ বিজ্ঞানে প্রতিমাসের শেষ দিনটিকে সংক্রান্তি বলা হয়। অর্থাৎ প্রতিমাসের শুভ আরম্ভ হয় সূর্যের রাশি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে।ভারতীয় জ্যোতিষ্ক বিজ্ঞান বারটি রাশির নাম করেছেন। সূর্য প্রতি মাসে একটি রাশিতে প্রবেশ করে। পৃথিবী ঘুরে সূর্যকে কেন্দ্র করে,আর সূর্য একেক রাশি করে বার মাসে বার রাশিতে গমন করে- এ এক মহা জাগতিক বিষয়। সূর্ষের এই রাশি গমনের ফলে বার মাসে ঘটে বারটি সংক্রান্তি।প্রতিটি সংক্রান্তির নিজস্ব নাম আছে এবং প্রতিটি সংক্রান্তিতে কোনো না কোনো পূজা-পার্বণের প্রচলন আছে। যেমন;-চৈত্র শেষে বৈশাখ মাসের সংক্রান্তির নাম হলো মহাবিষুব সংক্রান্তি। সর্বভারতীয় সনাতনীদের জীবনে মহাবিষুব সংক্রান্তি একটি বড় ধর্মীয় ও সামাজিক পূজা ও পার্বণের দিন।
(১) জৈষ্ঠ মাসের সংক্রান্তির নাম;- বিষ্ণুপদী সংক্রান্তি।
(২) আষাঢ় মাসের সংক্রান্তির নাম;- ষড়শীতি সংক্রান্তি।
(৩) শ্রাবণ মাসের সংক্রান্তির নাম;-দক্ষিণায়ন সংক্রান্তি।
(৪) শ্রাবণ মাসের এই দক্ষিণায়ন সংক্রান্তি হতে সূর্যের দক্ষিণায়ন শুরু,অর্থাৎ সূর্য কর্কট ক্রান্তির দিকে ক্রমশ যাত্রা শুরু করে,তখন তিল তিল করে দিন ছোট আর রাত বড় হতে থাকে।
ভারতীয় বৈদিক শাস্ত্রে সূর্যের কর্কট ক্রান্তিতে/দক্ষণায়নে গমনকে দক্ষিণায়ন অর্থাৎ দেবতাদের নিদ্রাকাল/নিদ্রাকালীন সময় বলে। তখন স্বর্গ লোকের দ্বার বন্ধ থাকে। আস্তে আস্তে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে।
(৫) ভাদ্রমাসের সংক্রান্তিকে বলে;-বিষ্ণুপদী সংক্রান্তি।
(৬) আশ্বিন মাসের সংক্রান্তির নাম-ষড়শীতি সংক্রান্তি।
(৭) কার্তিক মাসের সংক্রান্তির নাম;- জলবিষুব সংক্রান্তি।
(৮) অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তির নাম;- বিষ্ণুপদী সংক্রান্তি।
(৯) পৌষ মাসের সংক্রান্তির নাম;- ষড়শীতি সংক্রান্তি।
(১০) মাঘ মাসের সংক্রান্তির নাম;-উত্তরায়ণ সংক্রান্তি।
(১১) ফাল্গুন মাসের সংক্রান্তির নাম; বিষ্ণুপদী সংক্রান্তী।
(১২) চৈত্র মাসের সংক্রান্তির নাম;-ষড়শীতি সংক্রান্তি।
তবে আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হলো আগামী ঊনত্রিশে পৌষ ১৪২৮বাংলা,১৪ই জানুয়ারি শুক্রবার,২০২৩ ইং সূর্য দেবতার কর্কট ক্রান্তি অর্থাৎ দক্ষিণায়ন পরিভ্রমণ,শেষে মকর ক্রান্তিতে মকর রাশিতে আগমন নিয়ে।সূর্যের কর্কট ক্রান্তিকে বলে দক্ষিণায়ন আর মকরক্রান্তিকে বলে উত্তরায়ণ।
আগামী ঊনত্রিশে পৌষ ১৪২৮ বাংলা শুক্রবার ১৪ই জানুয়ারি সূর্য দেবতা যখনই ধনুরাশি ত্যাগ করে মকর রাশিতে প্রবেশ করবেন,তখনই শুরু হবে সূর্যের উত্তরায়ণ বা মকর সংক্রান্তি।কর্কট ক্রান্তিতে সূর্য দক্ষিণায়ন ভ্রমণ শেষ করে মকর ক্রান্তিতে মকর রাশিতে প্রবেশ করে যে উত্তরায়ণ সংক্রান্তি ঘটায় তা ভারতীয় বৈদিক শাস্ত্রের একটি অত্যন্ত পবিত্র ক্ষণ ও দিন। দিনটি প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শুভ সময়ের সূচনা করে। প্রকৃতিতে শীতের বিদায়,আসে বসন্তের আমেজ,তখন থেকে তিলে তিলে দিন বড় হতে থাকে,আর রাত হতে থাকে ছোট। বৈদিক শাস্ত্র মতে এই মকরসংক্রান্তি/উত্তরায়ণ সংক্রান্তির দিন হতে স্বর্গের দেবতারা জেগে ওঠেন। কর্কট ক্রান্তির দক্ষিণায়নের ছয় মাস হলো দেবতাদের নিদ্রাকাল। আর মকর ক্রান্তির উত্তরায়ণের ছয়মাস হলো দেবতাদের জাগরণ কাল। বৈদিক শাস্ত্রে মকর সংক্রান্তির/উত্তরায়ণ সংক্রান্তির এই দিন ক্ষণটিকে অত্যন্ত পূণ্যময় একটি দিন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মকরসংক্রান্তির/উত্তরায়ণ সংক্রান্তির এই দিন টি এতই পবিত্র এবং পুণ্যফল প্রদায়িনী যে,এই দিনে যদি কেউ দেহ ত্যাগ করে,তাহলে সেই ব্যক্তির আত্মা স্বর্গ লাভ করে,তাঁর যদি কোনো পুণ্যবল না ও থাকে,শুধু দিনটির মাহাত্ম্যের কারণে।
আমরা সবাই জানি যে মহাভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ ত্যাগী পুরুষ পিতামহ ভীষ্ম কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শরবিদ্ধ হয়ে আটান্ন দিন অপেক্ষা করছিলেন এই মহা পূণ্যময় দিন, মকরসংক্রান্তি/উত্তরায়ণ সংক্রান্তির জন্য।পিতার বরে ভীষ্ম স্বেচ্ছা মৃত্যুর বর লাভ করেছিলেন, এই জন্য তিনি শরশয্যায় থেকে অপেক্ষা করছিলেন যে,যখন সূর্যের মকরসংক্রান্তি/উত্তরায়ণ সংক্রান্তি হবে পৃথিবীতে তখন তিনি দেহ ত্যাগ করে সোজাসোজি স্বর্গে তাঁর পূর্ব স্থানে চলে যাবেন। কারণ এই দিন হতে স্বর্গের সব দ্বার খুলে যায়।দেবতারা সব জেগে ওঠেন।
চলবে…………………………….
সাংস্কৃতিক/মুক্ত কলম/মকর সংক্রান্তি/এসডি.