শিরোনাম
ধর্মপাশায় সংবাদ সম্মেলন করে মোঃ আবুল বাশারের উপজেলা চেয়ারম্যান পদ প্রার্থীতা ঘোষণা মাহে রমজানের দ্বিতীয় দশ দিন মাগফিরাতের শ্রীমঙ্গলে জাতির পিতার ১০৪-তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত সালাতুত তাসবিহ গোনাহ মাফের সর্বোত্তম ইবাদাত! চুনারুঘাটে মাদক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার সিলেটে হিন্দু রেস্তোরাঁতে ছাত্রলীগের হামলা ৭ এপিবিএন এর তৎপরতায় ৩,৫১,১৬০ টাকা ফিরে পেলেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা ২০০ সাইক্লিং সেঞ্চুরি সম্পন্ন করলেন কুলাউড়ার ‘সুপ্রিয়’ মানব পাচার চক্রের মূল হোতা শাহীন ও সাইদুর ৭এপিবিএন এর হাতে আটক সালাম মুর্শেদী গুলশানের বাড়ি অপহরণ করেছেন;ব্যারিস্টার সুমন
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৩ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

বিধবাদের প্রতি হিন্দু সমাজের অত্যাচার আর কত?

সত্যজিৎ দাস / ২৫২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার:
আদিমকালের ইতি হলেও আদিমতা যায়নি। আশির দশক,নব্বইয়ের দশক চলে গেলেও এই ২০২২ সালে এসেও কোনো মেয়ের স্বামী যদি মারা যায়,তখন আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা সহ অনেক কটুকথা এখনও চলে। যেমন;’আজকালকার মেয়েরা কোনো নিয়ম কানুন মানে না,বিয়ের পরও হাতে চুড়ি পরে না,নাকফুল পরে না।তাই তো টপটপ করে অল্প বয়সেই স্বামী মরে যায়। আরে যুগ যুগ ধরে মুরুব্বিরা যেসব নিয়ম-কানুন মেনে এসেছে,সে কী এমনি এমনিই!’

এদিকে একজন বিধবা সাজ-গোজ করে,তাতেও চোখ টাটায় সমাজের। ধরুন বিধবা মেয়েটি চাকরিজীবী। অন্য দশজন মানুষের মতোই সে সাজ পোশাক পরে তৈরি হয়ে অফিসে যাচ্ছে। তাকে যেতে দেখে প্রথম বাঁকা দৃষ্টিতে তাকায় প্রতিবেশি। পাশ কাটিয়ে যেতেই শুরু হয় ফিসফিসানি,দেখলেন ভাবী, বিধবা অথচ কী সাজ-পোশাক! শাড়ি পরছে আঁচল ভাঁজ করে। পেট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে।

সালোয়ার-কামিজ,প্যান্ট-শার্ট বা ফতুয়া পরলেও দোষ। দেখেন,ওড়না গলায় বা সাইডে পরেছে। হুহ! বিধবা আবার প্যান্ট পরে! সেই জন্যেই তো কপাল পুড়ছে! অফিসের সহকর্মীরাও কিন্তু ছাড় দেয় না। সাদা-মাটা হয়ে অফিসে গেলে বলবে,ইস! কাজের বুয়ার মতো অফিসে আসে। আরে বাবা অফিসের তো একটা সাজ-পোশাক আছে! মনের কষ্ট কি দেখিয়ে বেড়াতে হবে! সেজে গেলেও আড় চোখে দেখে সুযোগ পেলে মন্তব্য করে। মোট কথা,বিধবার সবটাতেই দোষ।

সে যদি কোনো পার্টিতে যায় বা একা কোথাও বেড়া যায়,তাহলে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। অথচ কোনো বিপত্নিকের পোশাক নিয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করেছে বলে শুনিনি কোনো দিন। সে যেখানে খুশি যেতে পারে,একা অথবা সঙ্গী নিয়ে,যেমন ইচ্ছে পোশাক পরতে পারে,যা ইচ্ছে করতে পারে। সমাজ তাকে কটাক্ষ করে না। তাকে নিয়ে ফিসফিসানি,কানাঘুষা হয় না।

কিন্তু যদি কারো বউ মারা যায়? অকালে? স্বামীটির ওপর কি কোনো দায় গিয়ে পড়ে? তবে কি সামাজিক এসব সংস্কার শুধুই মেয়েদের জন্য? আর সনাতন ধর্মের হলে তো স্বামীর মঙ্গল কামনায় নারীকে শাঁখা সিঁদুর পরতে বাধ্য করা হয়। অথচ স্বামী চিরকালই সামাজিক বিধি নিষেধের ঊর্ধ্বে। স্ত্রী’র মঙ্গল কামনায় তাকে কখনো অলংকার পরতে হয় না,টিপ দিতে হয় না,সিঁদুর পরতে হয় না।

এবার আসুন বিধবার প্রতি সমাজের সহানুভূতির নমুনায়। মেয়েটি যদি অল্প বয়সে বিধবা হয়,তাহলে প্রথমে আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনরা খুব আহা-উঁহু করবে। হায়! মেয়েটির এখন কী হবে! কীভাবে চলবে? আহারে কত অল্প বয়স। জীবন তো কেবল শুরু করেছে। বাকী জীবন কীভাবে কাটাবে? কাজেই ওকে দেখে শুনে আবার বিয়ে দাও। ঠিক তখনই মেয়েটির আবার বিয়েতে মত আছে কিনা কিংবা মেয়েটি কী চায় সেটা ক’জনের কাছে জানতে চাওয়া হয়? আর মেয়েটি যদি স্বাবলম্বী, উপার্জনক্ষম হয়? তাহলেও সমস্যা। কী মেয়েরে বাবা! স্বামী ঘরে গেছে দেখে একটুও বোঝা যায় না। দিব্বি সেজেগুজে অফিস করে বেড়াচ্ছে।

বিধবা মেয়েটির জৈবিক চাহিদা পাপ। কিন্তু বিপত্নিকের জন্য স্বাভাবিক। বিধবার অবিবাহিত ছেলের সঙ্গে বিয়ের ঘটনা বিরল। অথচ বিপত্নিক নির্দ্বিধায় অবিবাহিত মেয়ে খুঁজে বেড়ায়। আর বিধবা যদি হন সন্তানসহ? তাহলে তো দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে তার চাহিদা নিচের দিকে নামতে থাকে। বউয়ের সঙ্গে ছেলে-মেয়ের দায়িত্বও নিতে হবে! বিপত্নিক স্বামীর ঘরে যদি সন্তান থাকে, তাহলে সে এবং তার পরিবারের সদস্যরা ভীষণভাবে চাইবে মেয়েটি ঐ সন্তানদের যা হয়ে উঠুক। একটু এদিক-ওদিক হলেই অত্যাচারি সৎ মায়ের তকমাটা তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। বিপত্নিক লোকটা কিন্তু আগের সন্তানদের বাবা হয়ে উঠতে চান না কিছুতেই। তাতে সমাজের কেউ তার দিকে আঙুল তোলে না। তখন প্রবাদ আউড়ানো হয়,এক গাছের বাকল কি আরেক গাছে লাগে! এটা কি তবে মেয়েটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়!

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আন্দোলনের ফলে ১৮৫৬ সালে হিন্দু বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ হয়। হিন্দু বিধবাদের অসহনীয় দুঃখ,তাদের প্রতি পরিবারবর্গের অন্যায়,অবিচার, অত্যাচার তাকে গভীরভাবে ব্যথিত করে। তিনি প্রমাণ করেছিলেন,যে লোকাচার ধর্মের নামে সমাজে প্রচলিত,তা আসলে ধর্মবহির্ভূত স্থবিরতার আচারমাত্র।

এবার দেখা যাক ধর্মীয় গ্রন্থ কি বলে?
পবিত্র বেদ বলছে,স্বামীর মৃত্যু হলে বিধবা নারীকে পুনঃ বিবাহ করার স্বীকৃত বা অনুমোদন আছে। অথচ জন্মগুনী নরদেবতা বা দুষ্ট ব্রাহ্মণ্যবাদীদের নিয়মের কারণে বিধবা বিবাহ নিষিদ্ধ করেছিল। পরিশেষে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এসে জন্মগুনীদের ঘাঁড় ধরে বিধবা বিবাহ পুনঃ প্রচলন করেছিলেন।

হিন্দুধর্ম নারীদের মর্যাদার অভাব হিসেবে বিবেচনা করে না,তাই নারীর মর্যাদা নিশ্চিত করার বিষয়ে অনেক সুনির্দিষ্ট উদ্ধৃতি নেই। যাইহোক,প্রাথমিক ও মাধ্যমিক হিন্দু গ্রন্থে অনেক জায়গায়ই উল্লেখ আছে যা নারীর মর্যাদা নিশ্চিত করে। মহিলা পণ্ডিতদের উপনিষদের অনেক গল্প,যেমন জাবালার গল্প, মৈত্রেয়ী,গার্গী, লোপামুদ্রা ও হৈমাবতী ঊমা,নারীদের দেওয়া মর্যাদা প্রদর্শন করে। বৃহদারণ্যক উপনিষদের ৬.৪.১৭ শ্লোক অনুসারে,একজন মহিলা সন্তানের জন্ম হবে যিনি পণ্ডিত হবেন। উদ্ধৃতিটি একটি শিক্ষিত কন্যা প্রাপ্তির জন্য নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেয়।

উইল ডুরান্ট (১৮৮৫-১৯৮১) আমেরিকান ঐতিহাসিক তার বই স্টোরি অফ সিভিলাইজেশনে বলেছেন: “পরবর্তী ভারতের তুলনায় বৈদিক যুগে নারীরা অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করেছিল। বিয়ের ধরনগুলির চেয়ে তার সাথীর পছন্দের বিষয়ে তার আরও কিছু বলার ছিল। তিনি ভোজ এবং নৃত্যে অবাধে হাজির হয়েছিলেন এবং ধর্মীয় বলিতে পুরুষদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি পড়াশোনা করতে পারতেন এবং গার্গীর মতো দার্শনিক বিতর্কে লিপ্ত হতে পারতেন। যদি তাকে বিধবা রেখে দেওয়া হয় তবে তার পুনর্বিবাহে কোন বিধিনিষেধ ছিল না।” হিন্দুধর্মের প্রাচীন গ্রন্থগুলি নারীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে। ঋগ্বেদের দশম অধ্যায়, উদাহরণস্বরূপ,দেবীসূক্ত নামে পরিচিত স্তোত্রটিতে,সমস্ত মহাজগতের পিছনে নারীকে সর্বোচ্চ নীতি বলে দাবি করেছে।

আমি জগতের ঈশ্বরী,ধন প্রদায়িনী। ব্রহ্মকে জ্ঞাতা আমার আমিই যাঁদের জন্য যজ্ঞ করা হয় তাদের মধ্যে প্রথমা। বহুরূপে সর্বভূতে প্রবিষ্টা সেই আমাকে বহুস্থানে বা সর্বদেশে আরাধনা করা হয়। সবার ভোজন,দর্শন,শ্রবণ ও জীবন যাপন আমার শক্তিতেই সম্ভব হয়। আমাকে যে জানে না,সে দীন,হীন ও ক্ষীণ হয়ে যায়। প্রিয় সখা,আমার কথা শোনো,শ্রদ্ধা ও সাধনের দ্বারা যে পরম বস্তু লাভ হয়,আমি তার কথাই তোমাকে বলছি।

ব্রহ্মদ্বেষীকে বধ করার জন্য সংহারকারী রুদ্রের ধনুকে আমিই জ্যা পরিয়ে দিই। সৎ ব্যক্তিগণের বিরোধী শত্রুগণের সাথে সংগ্রাম করে আমিই তাদের পরাজিত করি। দ্যুলোক ও পৃথিবীতে আমি অন্তর্যামিনী রূপে পরিচিতা। আমি সেই পরম তত্ত্বের উপদেশ দিচ্ছি,দেবতা ও মানুষ যাঁর সেবা করেন। আমি স্বয়ং ব্রহ্মা। আমি যাঁকে রক্ষা করি সে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা বানিয়ে দিই,যাঁকে ইচ্ছা করি তাকে বৃহস্পতির মত মেধাবান বানিয়ে দিই। আমি স্বয়ং ব্রহ্মাভিন্ন আত্মা,যে আমারই স্বরূপ,তার গান করি।

এই বিশ্বের উপরিভাগের দ্যুলোককে আমিই প্রসব করে থাকি। দিব্য কারণ বারি রূপ সমুদ্রে,যেখানে সমস্ত প্রাণীর উদয় ও বিলোপ হয়, সেই ব্রহ্মচৈতন্য আমার নিবাসস্থল। সর্বভূতে আমি প্রবিষ্ট এবং বিশ্বকে আমি নিজের মায়া দ্বারা স্পর্শ করে আছি।

বায়ু যেমন নিজে থেকেই প্রবাহিত হয়,আমিই সেইরূপ স্বাধীনভাবে পঞ্চভূতের সমস্ত কার্য করে থাকি। নির্লিপ্তভাবে আমি বিশ্বের সকল বিকারের উপরে অবস্থান করি। ঋগ্বেদ ১০.১২৫.৩ – ১০.১২৫.৮,বেদে বেশ কিছু স্তোত্র আছে যারা নারী পণ্ডিতদের কাছে স্বীকৃত যারা “ব্রহ্মবাদিনী” নামে পরিচিত ছিলেন। অনেক শিক্ষিত নারী ছিলেন যারা তাদের দক্ষতা ও মেধা দিয়ে পুরুষদের পরাজিত করতে পারতেন। এর মধ্যে রয়েছে গার্গী,অহল্যা,মৈত্রেয়ী,লোপামুদ্রা,ঘোষা, স্বাহা,হৈমবতী ঊমা,গৌতমী,হেমালেখা, সীতা ইত্যাদি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Registration Form

[user_registration_form id=”154″]

পুরাতন সংবাদ দেখুন

বিভাগের খবর দেখুন