বেস্ট চাইল্ড আর্টিস্ট,কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা করা,সবচেয়ে পুরোনো মার্শাল আর্ট “কালারিপায়াত্তু”-রও অভিজ্ঞ পুনীত রাজকুমার এর ৪৭তম আজ। ১৯৭৫ সালের ১৭ মার্চ কন্নড় চলচ্চিত্রের ম্যাটিনি আইডল ডা. রাজকুমার এবং প্রযোজিকা পার্বতাম্মা রাজকুমার দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন লোহিত। তিনি ছিলেন রাজকুমার ও পার্বতাম্মা’র পঞ্চম ও কনিষ্ঠ পুত্র এবং কন্নড় চলচ্চিত্রের অগ্রগামী স্টার শিবরাজ কুমারের কনিষ্ঠ ভ্রাতা। লোহিত ছ’মাসের বয়স থেকেই “প্রেমদা কণিকে” ছবিটি দিয়ে নিজের অভিনয় জীবন শুরু করেন, এবং তিনি “সানাদি আপন্না”-তেও কাজ করেছেন যখন তার বয়স ছিল মাত্র ১ বৎসর। তিনি “ইয়ারিভান্নু”, “বসন্তা গীতা” ইত্যাদি ছবিতে তাঁর আসল পিতার পুত্র হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। তিনি অল্প বয়সেই স্কুল ছেড়ে দেন এবং ছবিতে অভিনয় করা শুরু করেন। তিনি নিজের বাড়িতেই একটি প্রাইভেট শিক্ষকের সাহায্যে লেখাপড়া চালিয়ে যান এবং পরে তিনি কম্পিউটার সায়েন্সে একটি ডিপ্লোমা হাসিল করেন। তারপর তিনি ছায়াছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার আগে একটি খনন ব্যবসায়ের সঙ্গেও যুক্ত হন। তিনি তাঁর প্রথম ছবিতে নায়ক হিসেবে কাজ করার আগে নৃত্যকলা এবং যুদ্ধকলার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। পুনীত ভারতের সবচেয়ে পুরোনো মার্শাল আর্ট “কালারিপায়াত্তু”-রও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
তাঁর অভিনয় জীবন বাস্তবতঃ শুরু হয়েছিল “বসন্তা গীতা” ছবির মাধ্যমে যেখানে তিনি ভাল অভিনয় করেছিলেন। এই ছবিটির পর তিনি ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত অনেকগুলি বিখ্যাত ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি “বেত্তাদা হুভু”-তে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। গোড়ার দিকে তাঁর নাম ছিল লোহিত। পরে নাম পরিবর্তন করে পুনীত রাজকুমার করা হয়। তবুও কর্ণাটকের অনেক লোক তাকে লোহিত নামেই চেনেন।শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি ১২টি ছবিতে কাজ করেন – “প্রেমদা কণিকে” (৬ মাসের শিশু), “সানাদি আপ্পান্না” (১ বৎসরের শিশু), “বসন্তা গীতা”, “ভাগ্যবন্তা”, “হোসা বেলাকু”, “চালিসুভা মদাগাল্লু”, “ভক্ত প্রহ্লাদ”, “এরাডু নক্ষত্রাগলু”, “বেত্তাদা হুভু”, “ইয়ারিভানু”, “শিবা মেচ্চিদা কান্নাপ্পা” এবং “পরশুরাম”। তিনি তাঁর পিতার সহিত ১২টির মধ্যে ১১টি ছবিতে কাজ করেছেন।
শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হওয়ার পর,তিনি পুনরায় ২০০২ সালে চলচ্চিত্র জগতে আসেন “আপ্পু” ছবির মুখ্য চরিত্র হিসেবে। এই ছবিটি পরপর ২০০২ সালে তেলুগু ভাষায় “ইডিয়েট” নামে এবং ২০০৩ সালে তামিল ভাষায় “দম” নামে পুনর্নির্মিত হয় এবং এই তিনটি ছবিই পরিচালনা করেছিলেন পরিচালক পুরী জগন্নাথ, যিনি পুনীতের ভ্রাতা শিবরাজ কুমারকে “যুবরাজ” ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন। তিনি “আরাসু” এবং “মিলনা” ছবির জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন। “আরাসু” এবং “রাজ – দ্য শোম্যান” ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছিলেন এবং “মিলনা” ছবির জন্য তিনি কর্ণাটক রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার সমারোহে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন। “মিলনা” ছবিটি কর্ণাটকে ৫০ দিনের জন্য ১৩৭টি কেন্দ্রে চলেছিল এবং ১০০ দিনের জন্য ৫০টি কেন্দ্রে চলেছিল। ছবিটি বেঙ্গালুরুর পিভিআর সিনেমা হলে সেপ্টেম্বর ২০০৮-এ ১ বছরের জন্য চলেছিল যেটা একটা নজিরবিহীন রেকর্ড। ২০০৯ সালে তিনি “রাজ-দ্য শোম্যান” ছবিতে অভিনয় করেন, যেটার জন্য তিনি সমালোচকদের কাছ থেকে মিশ্র সমালোচনা পান। ওই বছরই তার অন্য একটি ছবি “রাম” বক্স অফিসে সাফল্যের মুখ দেখে। ২০১০ সালে তার “পৃথ্বী” ছবিটি মুক্তি পায় এবং ৭৫ দিন ধরে চলে। ওই সালে তার আরও একটি ছবি “জ্যাকি” মুক্তি পায়, এবং এই দুটি ছবির জন্য তিনি যথেষ্ট প্রশংসাও কুড়োন।
২০১১ সালে তিনি তিনটি ছবিতে অভিনয় করেন যেগুলি হল “হুডুগারু”,যোগরাজ ভাট পরিচালিত “পরমাত্মা” এবং দুনিয়া সুরি পরিচালিত “আন্না বন্ড” যেটা ২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল মুক্তি পেয়েছে।অভিনয় ছাড়াও পুনীত প্রচুর গান গেয়েছেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই তার অভিনয় করা সবকটি ছবিতে গান গেয়েছেন। এমনকি মুখ্য অভিনেতা হিসেবে যে ছবিগুলিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন, সেগুলিতে তিনি একটা করে গান অন্তত গেয়েছিলেন। যে ছবিগুলিতে তিনি গান গেয়েছিলেন, তার মধ্যে “আপ্পু” এবং “বংশী” ছবিগুলি উল্লেখযোগ্য। তিনি তার ভ্রাতা শিবরাজ কুমারের একটি ছবি “মাইলারি”তেও গান গেয়েছেন।তিনি ২৮ বছর বয়সে অশ্বিনী রেভানিথকে বিয়ে করেন এবং তাদের দ্রিতি এবং বন্দিতা নামের দুটি কন্যাসন্তান আছে। ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর ৪৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বেঙ্গালুরু বিক্রম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পুনীত।